গল্প: হঠাৎ বিয়ে পর্ব -১

গল্প: হঠাৎ বিয়ে 

পর্ব -১

Author – Hassab bin Ahmed 

                   আমার নাম সাজিব, university of science and technology, meghalaya থেকে Masters of science 🧪, এ উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন রত আছি। সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে বাসায় এসেছি।

সকাল ১০ টা বাজে, সকালের খাবার খেয়ে রুমে এসে মোবাইল দেখতেছি। এর ভিতর আম্মু রুমে প্রবেশ করলো।

আমি- আম্মু কিছু বলবে?

আম্মু – না, তেমন কিছু না, আসলে আমার বান্ধবীর একটি মেয়ে আছে..

       আমি আম্মুর কথা শেষ করতে না দিয়েই উত্তর দিলাম।

আমি – আম্মু আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি,আমি এখন বিয়ে করব না।তা ছাড়া আমি এখনো ছাত্র। আমি তোমাকে আগেই বলেছি নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে আমি বিয়ে করবো না।

আম্মু – আগে তো আমার কথা শেষ করতে দে। আমি জানি যে তুই বিয়ে করবি না। আমাদের কপালে কি আর ছেলের বউ দেখার সৌভাগ্য আছে। আমাদের কথা যদি ভাবতি তাহলে ঠিক ই বিয়ে করতি।সব বাবা মায়ের ই সপ্ন থাকে। তাদের ছেলেকে বিয়ে করিয়ে চাদের মতো সুন্দর একটি বৌমা নিয়ে আসবে। আমাদের তো আর সেই কপাল নেই। 

আমি – আম্মু, আবার এইসব শুরু করে দিলা। আচ্ছা ঠিক আছে,কি বলতে এসেছিলে বলো।

আম্মু – হুম, এখন তো আমার কথা ভালো লাগবে না। যা বলতে এসেছিলাম, আজকে বিকালে আমার বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে। আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে।

আমি – আচ্ছা ঠিক আছে! যাবো  তাও এখন আর ইমোশনাল হয়ো না প্লিজ!

          আম্মু চলে গেল, আব্বু আম্মু কি যে শুরু করেছে দুইটা মাস ধরে। শূধু একটি কথা, বিয়ে কর, বিয়ে কর!

আচ্ছা আপনারাই বলুন এখন বিয়ে করলে বৌকে ১০ টাকার আইচক্রিম কিনি দিতেও বাসা থেকে টাকা নিতে হবে। আর বাকি সব নাই বলি। যাই হোক এই সব বাদ।

বিকালে রেডি হয়ে গেলাম বিয়ে খাবার জন্য। মেয়ের বাবা টাকা খরচ করেছে বলতে হবে! শুনেছি একমাত্র মেয়ে! এতো মানুষ সবাই ব্যস্ত নিজের নিজের কাজে! আমার মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত মেয়ে গুলো, মেয়ে গুলো ব্যস্ত ইনস্টাগ্রাম রিল/ টিকটক তৈরি করাতে! আর আমি ভাবছি,কখন খেতে দিবে। আমর কথা হচ্ছে দাওয়াতে গিয়ে বিরিয়ানি না খেয়ে আসা যাবে না! আমার পছন্দের খাবার হচ্ছে দুটি।১. বিরিয়ানি,২.গাজোরের হালুয়া! ঘন্টা দুই পর খেতে দিয়েছে। আমি খাবার খেতে বসবো এমন সময় দেখি বিয়ে বাড়ীতে দৌড়াদৌড়ি করতেছে! এক পলকে কান্না – কাটির  পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল। আমি দৌড়ে আম্মুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার কি হয়েছে?

আম্মু – যে ছেলের সঙ্গে হুমাইরার বিয়ে ঠিক হয়েছিল! (আম্মুর বান্ধবীর মেয়ের নাম হুমাইরা) এই ছেলে তার গার্লফ্রেন্ডর সঙ্গে ভেগে গেছে! এখন তুই বল হুমাইরার কি হবে? তুই তো ভালো করেই জানিস আমাদের সমাজ এখন হুমাইরা কে অলক্ষী বলবে। এই মেয়েটার আর বিয়ে হবে না। তুই বল মেয়েটার কি দোষ! হুমাইরার আম্মু তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে! 

          বলতে বলতে আম্মু ও কেঁদে ফেলেছে ! সত্যি মেয়েটার ভাগ্য অনেক খারাপ!! হঠাৎ আমি আম্মুকে বললাম

আমি – আম্মু আমি হুমাইরা কে বিয়ে করবো!

          আমার কথা শুনে আম্মু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!

আম্মু – তুই কি সত্যি বলছিস??

আমি – জি আমি ভেবে চিন্তেই বলছি! তুমি আব্বুর সাথে কথা বলো।

   আমার কথা শুনে আম্মু অনেক খুশি! আর আব্বু তো মনে হয় এই কথার অপেক্ষাই ছিলো! তো দুই পক্ষের আলোচনা করে! সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের বেবস্থা করা হলো! আর আমি এক পলকে বিবাহিত হয়ে গেলাম।লকে বলে মানুষ দুই প্রকার জীবিত আর বিবাহিত!

যিহেত বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল। তাই আব্বু সিদ্ধান্ত দিলো ,এখন হুমাইরা এই বাসায় ই থাকবে! আর হুমাইরার হায়ার সেকেন্ডারি পরিক্ষার ২ মাস বাকি আছে!তাই হুমাইরার পরিক্ষার পর যাক জমক ভাবে আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে!

মানে মূল কথা হলো, আমি বিবাহিত হয়েও বেচেলার!

কিন্তু হুমাইরার আব্বু আম্মুর অস্থিরতা দেখে সত্যি খারাপ লাগছে! আমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে বুঝতে পারছে না! হুমাইরার আব্বু আমার হাত ধরে বলছে

হুমাইরার আব্বু – বাবা সজিব! তোমাকে দেখে আমি চিন্তা করতে ছি আল্লাহ কিভাবে মানুষ কে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন! সত্যি আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের একা ছেড়ে দেয় না! আমি বললবো না আমার মেয়ে ধনির ঘড়ের দুলালি! কিন্তু হুমাইরা আমাদের সবার অনেক আদড়ের! আমার মেয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে বড়ো হয়েছে! তাই আমি মনে করি ও তোমার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পাড়বে! আর ও একটু আবেগি! তাই তুমি একটু দেখে রেখো!

আমি – আপনি কনো চিন্তা করবেন না! আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমার ভালো ভাবে জিবন পার করতে পারি!

কিছু সময় পর আমাকে হুমাইরার রুমে প্রবেশ করতে দিলো! 

আম্মু – সজিব, বেশি দেড়ি করিস না! বাসায় যেতে হবে! রাত অনেক হয়েছে?

 আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে,চোখ বন্ধ করে রুমে প্রবেশ করলাম!

রুমে প্রবেশ করার পড় কেউ একজন হয়তো সালাম দিয়েছিলো। চোখ খুলে তাকালাম সুন্দর পরিপাটি রুম এতো সুন্দর রুম দেখতেও ভালো লাগে।  আমার সামনে হয়তো হুমাইরা দারিয়ে আছে , সঠিক বলতে পারছি না কারন কালো বোরখা পরিহিত আছে এমনকি নিকাব ও পরেছে , আমি তো সালাম ফিরানোর কথা ভুলেই গেছি, মেয়েটি আমাকে একটা ছোফায় বসতে বললো আমি কোনমতে বসলাম , মেয়েটিও আমার পাশে থাকা ছোফায় বসলো,  আমি ঘেমে গেছি তাই রুমাল দিয়ে মুখটা একটু মুছে নিলাম , মেয়েটি নরম সুরে বললো আমার নাম “হুমাইরা বিনতে আব্দুলা” সবাই আমাকে “হুমাইরা” বলে ডাকে ।

আমি তো কন্ঠ শুনেই শেষ এতো সুন্দর কন্ঠ কিভাবে হতে পারে।  

কিছু সময় নিরবতা , আমি শুধু মুখ মুছে যাচ্ছি! ভাবলাম এখন নিরবতা ভেঙ্গে কিছু বলা দড়কার!

আমি:- আপনি ভালো আছেন?

হুমাইরা:- জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?

(আমি তো ভাবতেছি এতো সুন্দর কন্ঠ হয় কিভাবে।)

আমি:- জি আমিও ভালো আছি। আমি জানিনা আমাদের এখানে কি বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ, আমার কোন প্রশ্ন নেই আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাস করতে পারেন,  

হুমাইরা মাথা ঝাকিয়ে জানালো কোন প্রশ্ন নেই ,  তারপর হুমাইরা নিকাব খুলতে লাগলো.,

আমি তো হা হয়ে তাকিয়ে আছি , এই আমি কি দেখেছি , মায়াবী চোখ, গোলাপী ঠোট, ঠোটের কোনে যেন হাঁসি লেগেই আছে। কান্নার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমি হয়তো বলতে পারবো হুমাইরা কি পরিমান সুন্দরী, কিন্তু আমি হুমাইরার চেহারার মাঝে যে  মায়া দেখিছি তার বর্ননা লিখে বুঝানোর কোন শক্তি আমার নেই। আমি এক পলকে চেয়ে আছি দেখে হুমাইরা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো এই লজ্জা পাওয়া মুখটা আরো সুন্দর লাগতেছে খেয়াল করলাম লজ্জায় হুমাইরার চেহারা আনার ফলের মতো লাল হয়ে গেছে আর সেই মিষ্টি হাসি তো আছেই। আমি তো এই হাসি দেখাই পাগল হয়ে গেছি।

এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছে,

রমনী অনর্থক হাসে

তাহা দেখিয়া পুরুষ অনর্থক কাঁদে

অনেক পুরুষ ছন্দ মিলাইতে বসে

আবার কেহ গোলায়া দড়ি দিয়ে মরে !!!! “””””

জানিনা আমার অবস্থা কি হবে? 

আমিও চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে বললাম 

আমি- আপনাকে দুটি কথা বলি?

হুমাইরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো!

আমি – আপনি এই ভাবে হঠাৎ করে নিকাব সরাবেন না?

হুমাইরা – কেন?

আমি – আমি এতো সুন্দর চেহারা আর কখনো দেখি নাই! আপনাকে দেখে আমার হার্ট বিট বেড়ে গেছে! কখনো বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে!

( হুমায়রা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো!)

আমি – আর আপনি কান্না করবেন না! এতো সুন্দর চাঁদের মতো চেহারায় কান্না মানায় না!

   হুমায়রা কিছু বললো না! কাড়ো মুখে কোন কথা নেই! আমি চেয়ে আছি হুমাইরার অপরুপ সুন্দর চেহারার দিকে! এতো সুন্দর একটি মুহূর্তের মধ্যে আছি! আমার ফনের মনে হয় আমার সুখ সহ্য হচ্ছে না!বেজেই চলছে! ফোন রিসিভ করছি না দেখে হুমাইরা জিজ্ঞেস করলো ,কে ফোন করছে??

আমি – আম্মু ফোন করতেছে! য়াওয়ার জন্য!

হুমায়রা – ওওও! রাত তো অনেক হয়েছে! আপনার এখন যাওয়া উচিৎ!

আমি পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে হুমাইরার হাতে দিলাম! কিন্তু হাত ধরতে চেওয় ধরলাম না! আসলে সহস করতে পারলাম না!

আমি – আপনাকে এখন দেওয়ার মতো কিছু নেই! তাই আজ আমাদের দুজনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাতে আপনাকে কথা দিচ্ছি! আমার দেহে একফুটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আপনার সন্মানে/ মর্যাদার কোন কমতি হতে দিবো না। আমি আপনাকে সবসময় আগলে রাখবো। এখন থেকে এইটা আপনার! আর হ্যা মানিব্যাগে ভিতর আমার নম্বর আছে কল দিয়েন প্লিজ।

 হুমায়রা কিছু বললো না! আমি বের হয়ে যাবো ,এমন সময় হুমাইরা পিছন থেকে ডাকলো

হুমায়রা – শুনেছেন??

আমি – জি বলুন ( আমি মনে হয় এই ডাকের অপেক্ষায় ই ছিলাম)

হুমায়রা – সাবধানে যাবেন!!

আমিও মাথা নাড়িয়ে শিকার করলাম, এই প্রথম আমার মনে হচ্ছে আমার অনেক দামি বস্তু রেখে যাচ্ছি। সৃষ্টি কর্তা কি অকৃত্রিম সম্পর্ক দিয়েছেন মানুষ কে! যে মেয়েকে আমি কিছুক্ষন আগে চিনতাম ও না এখন সেই মেয়েটিকে ছেড়ে যেতে  ইচ্ছে করছে না। মনের ভিতর অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে, কিছু লজ্জা, কিছু ভালোবাসা, কিছু ভয়,সব কিছুর মিশ্র অনুভূতি একসঙ্গে হচ্ছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি। হঠাৎ আম্মুর ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল।

আম্মু – কি সজিব? বউ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। তোকে কি রেখে যোবো এখানে??

আমি – আম্মু তুমিও না। চলো জলদি।

        বাসায় পৌছে দেখি ১ টা বাজে! খুদাও লেগেছে অনেক।  পরে অবশ্য হুমায়রাদের বাসায় খাবার খেতে দিয়েছিলো কিন্তু লজ্জায় খেতে পারি নাই। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আম্মু খেতে ঠাকছে। 

আমি- সজিব ঐ বাসায় তো কিছু খাস নি খেয়ে নে। আর জানিস আমি আজকে সত্যি খুশি। আজকে তুই সত্যিই খুব ভালো একটা কাজ করেছিছ।

খাবার খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি একটা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে” আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতু. বাসায় কি পৌঁছে গেছেন?

কে হতে পারে? নিশ্চয় হুমায়রা।তাই রিপ্লাই করলাম

“ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু. জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই পৌঁছে গেছি! আপনি কে?”

কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো ” আমি হুমাইরা” 

আমি ভাবতেছি রিপ্লাই না করে কল করি, কিন্তু এতো রাতে কল করটা কি ভালো হবে?? ভাবতে ভাবতে কল করেই ফেললাম। 

সঙ্গে সঙ্গে ই রিসিভ করে ছালাম দিলো

হুমায়রা – আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতু

( আমি হুমাইরার কন্ঠ শুনলেই পাগলপ্রায় হয়ে যাই! এতো সুন্দর কমল কন্ঠ)

আমি- ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু. কি করেন??

হুমায়রা – কিছু না। আপনি কি করেন??

আমি – শুয়ে আছি!

হুমায়রা – খাবার খেয়েছেন?

আমি – জি খেয়েই শুয়ে পড়লাম। আসলে হয়েছে কি আপনাদের বাসায় তো লজ্জায় খেতে পারি নাই তাই, বাসায় এসে খেলাম। আপনি খেয়েছেন??

হুমায়রা – না, খাবো এখন।

আমি – কি বলেন, রাত প্রায় ৩ টা বাজে। জান এখুনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এমনি আজ আপনার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।

হুমায়রা – জি আচ্ছা! তাহলে রাখছি! বলেই ফোন কেটে দিল।

মনে মনে শুধু বললাম আল্লাহ কালকে অন্তত একবার হুমায়রার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিও। 

রাত ৩ টা বেজে গেছে। তাই আর দেরি না করে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে… ।

                           ……


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *