গল্প: হঠাৎ বিয়ে
পর্ব -২
Author – Hassab bin Ahmed
সকাল ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ডাকে।
আমি রুম থেকে উঠে বাহির বের হতেই আম্মু বলা শুরু করলো ” কিরে এতো বেলা হয়ে গেলো। মেয়েটাকে তো একবার দেখতে যেতে হবে নাকি?? তোর কি কোনো চিন্তা নেই?? আমরা সবাই কখন থেকে রেডি হয়ে আছি। হুমায়রার আব্বা কমছে কম ১০ বার কল করেছে, কখনো যাবো।”
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আমার দোয়া এতো তাড়াতাড়ি কবুল হবে! কে জানে! রাত ভর চিন্তা করলাম কিভাবে হুমায়রার সঙ্গে দেখা করা যায় এখন দেখি মেঘ না চাইতেই জল। আমি ও রেডি হয়ে নিলাম। আমি কখনো ইস্টাইল করি না সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করি! কিন্তু আজ দুটো সার্ট চেন্জ করলাম! মনে হচ্ছে কিভাবে গেলে হুমায়রার ভালো লাগবে। শেষ মেষ আধাঘন্টা পর তৈরি হলাম। আমার অবস্থা দেখে আমার নিজেরিই হাঁসি পাচ্ছে। সত্যি ভালোবাসা মানুষকে পাগল বানিয়ে দেয়। তারপর আব্বু আম্মু আমি বাজারে গিয়ে কিছু শপিং করে হুমায়রাদের বাসায় গেলাম। সবাই মনে হচ্ছে আমাদের অপেক্ষাই ছিলো। সবার সঙ্গে কথা বললাম! কিন্তু আমার প্রিয়তমাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। অনেকেই এসেছে জামাই দেখতে, আর আমার দুচোখ খুঁজে বেরচ্ছে মায়া ভরা আরো এক জোড়া চোখ কে। কাকে কি জিগ্গেস করবো। আমার আব্বা আম্মা তো মনে হয় এই জগতে নাই। যে গল্প শুরু করেছ মনে হয় না, আজকে এই গল্প শেষ হবে। না আর তো সহ্য করতে
পারছি না। এর ভিতর, আমার শশুর আব্বা বলে উঠলো।
মা নিশি তোমার সজিব ভাইজান কে আপুর রুমে নিয়ে যাও। ওও আচ্ছা নিশি তাহলে হুমায়রার বোন। নিশি আমাকে হুমায়রার রুমে এনে দিয়ে গেলেন। মনে মনে শহুর আব্বাকে ধন্যবাদ দিলাম। হুমায়রাও দাঁড়িয়ে আছে আমিও দাড়িয়ে আছি।
আছি – ভালো আছেন?
হুমায়রা – জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো! আপনি??
আমি – জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বশে কথা বলি?
হুমায়রা – জি , আপনি বসুন।
আমি হুমাইরার খাটে বসলাম, হুমায়রা একটু দুরে গিয়ে বসলো। আমি পকেট থেকে একটা পেকেট বের করে হুমায়রা কে দিলাম ” এইটা আপনার জন্য”
হুমায়রা আমার হাত থেকে পেকেট টা নিলো।
হুমায়রা – আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করি?
আমি – অবশ্যই, আপনি যে কোন প্রশ্ন নির্দিধায় করতে পারেন?
হুমায়রা – আপনি আমায় কেন বিয়ে করলেন? করুনা করে?
আমি – আসলে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি হবে তা আমার যানা নেই। হয়তো এর থেকে কঠিন কোন প্রশ্ন আমাকে কেউ করে নাই। কিন্তু আমি এইটুকু বলতে পারি আমি আপনাকে করুনা করি নাই। অতো ভালোমানুষ আমি না।
হুমায়রা – কাল যে ঘটনা টা ঘটলো তাই প্রশ্ন টা করছি! ভুল বুঝবেন না! আপনারো কি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?( আমতা আমতা করে বলল)
আমি – আসলে আমি একটু লাজুক প্রকৃতির ছেলে । কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস হয়ে উঠে নাই কখনো । যাকে আমরা সাধারণত বলদ মার্কা বলে মজা করি । কোন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব করা তো বহু দুরের কথা কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস যোগাতে পারতাম না তো এভাবেই কাটছিলো দিন গুলো। সময় পার হতে লাগলো আমার প্রেম করার ইচ্ছে বাড়তে থাকলো , অনেক মেয়েকে প্রপোজ করার কথা ভাবলেও কাওকে বলতে পারতাম না। আরো একটি কথা আমি অনেক মুভি দেখতে ভালো বাসি । হঠাৎ একদিন বলিউডের একটি মুভি দেখলাম । মুভি টার নাম ছিল “বিবাহ “( vivah) । এই চিনেমা দেখার পর আমার প্রেম করার ইচ্ছে চলে গেল । আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এরেঞ্জ মেরেজ করবো । তার পর থেকে আমার বউ এর জন্য অপেক্ষা করতেছে প্রেম করার জন্য ।🤗
হুমায়রা কিছু বলেছ না!দেখে আমি প্রশ্ন করলাম
” আপনার কোন বয়ফ্রেন্ড…..”
হুমায়রা – না! কখনই না। আমি আল্লাহকে ভয় করি। আর ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম সম্পূর্ণ হারাম।
আমি একটু সাহস করে হুমায়রার পাশে গিয়ে বসলাম।
আমি – আমি একটা কথা বলি দয়াকরে রাগ করবেন না!
হুমায়রা – বলুন কি বলতে চায়।
আমি ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করে বললাম
আমি – আ আমি কি আপনার হাতা টা ধরতে পারি??
হুমায়রা তার হাত আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বল্ল, এতে রাগ করার কি আছে। আমি আপনার স্ত্রী। আমি তো পুরোটাই আপনার।
এই প্রথম বউ এর হাত স্পর্শ করলাম।এর আলাদা একটি ভালোলাগা আছে। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আমি – আমি আপনাকে দেখে সত্যিই অবাক হই । আপনি এতো ময়াময় একজন মানুষ।
হুমায়রা – আপনি একটু বেশি বলেন।
আমি – বেশি না । সত্যি বলছি আমি আমার জীবনের, এতো সুন্দর ময়াভরা চেহারা দেখি নাই। আর আপনার কন্ঠ কি বলবো আপনার কন্ঠ শুনলে তো আমার অন্তর গলে পানি হয়ে যায়।
আমি হুমাইরার হাত দুটো নিয়ে আমার ঠোঁট সুইয়ে দিবো এমন সময় নিশি আসলো, সঙ্গে সঙ্গে হুমায়রা আমার থেকে হাত শরিয় নিলো
নিশি – সবাই আপনাদের খাবারের জন্য ডাকছে।
(আমি মনে মনে বলি ডাকার আর টাইমিং পেল না)
কি আর করা উপাই নেই খাবার জন্য গেলাম। খেতে বসে তো আমার গলা শুকিয়ে গেল! এতো এইটেম মনে হয় আমি কখনো এক সঙ্গে দেখি নাই কমছে কম ১০ টা আইটেম তো হবেই! আমার অবস্থা দেখে হুমাইরা মনে হয় খুশি হয়েছে! এতো কিভাবে খাবো! কিছু খেয়ে সোজা হুমাইরার রুমে চলে গেলাম! হুমাইরাও আমার পিছন পিছন আসলো!
আমি – আজকে যে খাবার খেয়েছি এক বছর আর খেতে হবে না!
হুমাইরা আমার কথা শুনে মুচকি হাসি দিলো! যা হুমাইরার সৌন্দর্য কে অনেক গুন বৃদ্ধি করে দিয়েছে!
আমি – কি হলো দাঁড়িয়ে কেন বসেন!
( হুমায়রা আমার কথা শুনে বসোল ঠিকিই কিন্তু অনেক দূরে সরে গিয়ে!)
হুমাইরা – আপনাকে একটি প্রশ্ন করি!
আমি – অনুমতি নিতে হবে না! যখন খুশি তখন প্রশ্ন করতে পারেন!
হুমায়রা -আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি? আপনার কি মনে হয়?
আমি – উদ্দেশ্য কি হবে! ভালোভাবে জীবন যাপন করা? আসলে আমি কখনো এইভাবে ভেবে দেখি নাই!
আপনি বলেন না!
হুমায়র- আমার মনে হয় এই প্রশ্নটার সবচেয়ে সেরা উত্তর দিতে পারবেন আমাদের স্রষ্টা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই উত্তর দিতে পারবেন যে, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যটা কী? আপনি কি একমত?
আমি – অবশ্যই!
হুমায়রা – মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা কোন উদ্দেশ্য ব্যতীত সৃষ্টি করেন নি। নিশ্চয়ই মানব সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন-
“আমি জ্বীন এবং মানুষকে এই কারণে সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আমার ইবাদত করে। (সূরা যারিয়াত: আয়াত-৫৬)
তাহলে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যে হলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা।
আমি জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক আর্টিকেল পড়ছি! কিন্তু এর মতো স্পষ্ট উদ্দেশ্য কখনো দেখিনাই!আর এর থেকে ভালো উদ্দেশ্য আর কি হতে পারে!এই উদ্দেশ্য টা হচ্ছে একটা পেকেজ! পৃথিবীতে আপনি যত ভালো ভালো ভালো উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে নিয়ে আসেন! সব কিছুই আমার এই পেকেজের ভিতর আছে! ধরন আপনার জীবনের উদ্দেশ্য গরিব কে খাবার খায়ানো! আমি যদি আল্লাহর ইবাদত করতে চাই তাহলে আমাকে গরিব লোকদের খাবার খাওয়াতে হবে! যদি তা না করি তাহলে আমি মুছলিম হতে পারি নাই!
আমি – হুঁম ঠিক! আমারো মনে হয় এখন জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে!
আমি – আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন ছিল?
হুমায়রা – জি বলুন?
আমি – আমার শরীরে কি তারকাঁটা ?
হুমাইরা – মানে??
আমি – না মানে যদি আমার শরীরে তারকাঁটা না থাকে তাহলে এতো দূরে দূরে থাকেন কেন? একটু পর তো চলেই যাবো!
হুমায়রা আমার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে,একটু আমার দিকে এগিয়ে আসলো
এই লজ্জা আমাকেই ভাংতে হবে! তাই আমি আস্তে আস্তে আমার মুখটা হুমাইরার ঘারের কাছে নিয়ে গেলাম! হুমায়রা চোখ বন্ধ করে আছে! মনে হচ্ছে অনেক ভয় পেয়েছে! এরপর হুমাইরার কানে কানে বললাম তোমাকে যে আমার মানিব্যাগ দিয়েছিলাম ওর ভিতর আমার ইউনিভার্সিটির আই কার্ড আছে! ঐ টা দেন!
হুমায়রা আমার কথা শুনে বড়ো বড়ো করে তাকালো
হুমায়রা – কেন দিবো? দিবো না,?
আমি – কেন আপনি আই কার্ড দিয়ে কি করবেন?
হুমায়রা – আপনি তো কাল বলেছিলেন যে মানিব্যাগে যা কিছু আছে সব আমার? তো এখন ঐ টা আমার! আমার বস্তু আপনাকে কেন দিবো ?
আমি – আপনি তো আমার স্ত্রী ?
হুমায়রা – স্ত্রী হলেই কি দিতে হবে?
আমি – না,মানে আমি যানতে চাচ্ছি -আরবিতে স্ত্রী কে কি বলে?
হুমায়রা- “রাব্বাতুল বাইত”
আমি – এর অর্থ কি?
হুমায়রা – ঘরের রানী!
আমি – তাহলে আপনি আমার কাছে রানী হয়ে গেলেন। ছো একজন ভালো রাজা অথবা রানীর প্রথম কর্তব্য হচ্ছে প্রজাদের ভালো – মন্দর দিকে নজর দেওয়া!তাই মহারানীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমার প্রয়োজনীয় আই কার্ড দিয়ে আমাকে বাধিত কর যেন!
ইতি
আপনার অবাধ্য স্বামী
হুমায়রা – আপনার অনুরোধ মঞ্জুর করা হয়েছে!😄😄
চলবে……..
Leave a Reply