অধিকার”
পর্ব:-4
Writer:-Hassab bin Ahmed.
বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে আমার বিয়েটা সমাধা হলো। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম জাঁকজমকভাবে সবাইকে সাথে নিয়েই বিয়ে করবো। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপান্তরিত হয়েছে। হুমায়রা ঘরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে , আমি ঘরে ঢুকার সাহস পাচ্ছি না , বুঝতে পারছি না যে ঘরে অনায়াসে ঢুকে পরতাম , যখন যা খুশি তাই করতাম আজ সেই ঘরে প্রবেশ করতে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি । ঘরে প্রবেশ করে হুমায়রা কে সালাম দিলাম । মনে হচ্ছে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি । এই শিতের ভিতরে ঠান্ডা লাগার কথা , গরম লাগার ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। নার্ভাস হওয়ার কারণে এরকম হচ্ছে মনে হয়। টেবিলের উপরের জগ থেকে পানি ঢেলে খেলাম। পরিস্থতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
আমি- আমি কি বিছানায় বসতে পারি ।
হুমায়রা কিছু বললো না শুধু মাথা নাড়িয়ে বসতে বললো। বিছানায় বসে ভাবছি কিভাবে কি শুরু করবো , বিয়ের আগে এই রাতে কে ঘিরে কোত কল্পনা করে রেখেছি , কিন্তু আজ সব গুলিয়ে ফেলেছি। একটু সাহসী হয়ে বললাম , আমি আপনার ঘোমটা উঠাতে পারি , হুমাইরা তাও কিছুই বললো না । তাই আর একটু সাহস করে ঘোমটা উঠিয়ে দিলাম।
টানা টানা চোখে কাজল থাকায় আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে হুমাইরা কে। ওই চোখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। এক পলকে মুখের দিকে তাকিয়ে আছি কিছুক্ষণ, আমি মনে হয় কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, এতোক্ষণে নার্ভাস ভাবটা কেটে গিয়েছে। মেয়েটিকে খুব আপন লাগছে। হুমায়রা মুচকি হেসে বললো-
হুমায়রা- এভাবেই চেয়ে থাকবেন , আমার বুঝি লজ্জা করে না??😌😌
আমি চোখ নিচু করলাম ,
আমি- আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের এক করে দিয়েছে । তাই দুই রাকাত নামাজ আদায় করা উচিৎ ।
হুমায়র- ওওও আচ্ছা আমর অজু নেই তাহলে আমি কি অজু করে আসবো ?
আমি- জি অবশ্যই , চলেন আমি আপনাকে বাথরুম দেখিয়ে দেই ।
হুমায়রা- আচ্ছা আরো একটি কথা , দেখুন আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানিনা , অজু করার সময় কি কোন দোয়া পড়তে হবে ? আপনি কি বলতে পারেন?
আমি- অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবেন আর অজুর শেষে কলেমা শাহাদাত পাঠ করবেন।( ইবনে মাজাহ্ হাদীস নং ৩৯৭)
হুমায়রা- আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর দুজনে নামাজ আদায় করে বিছানায় বসলাম ।
হুমায়রা- আচ্ছা আমি কি বিয়ের পোশাক খুলতে পারি ?
আমি – জি অবশ্যই , আপনার যা ভালো লাগে তাই পড়তে পারেন।
হুমায়রা ফ্রেস হয়ে নিল রঙের কাপড় পড়েছে , এখন হুমাইরা কে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। হুমায়রা এসে আমার পাশে বসলো ,
আমি – একটি কথা বলি রাগ করবেনা তো?
হুম- জি বলুন?
আমি- আপনাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে , মনে হচ্ছে আমার স্বপ্নের নীল প্রজাপতি।
হুমায়রা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে
হুমায়রা- ধন্যবাদ ( লজ্জা মাখা কন্ঠে)
আমি- আচ্ছা আমি কি আপনার হাত টা ধরতে পারি?
হুমায়রা কিছু বললো না মাথা নিচু করে তার এক হাত আমার দিকে এগিয়ে দিল ।
আমি- আমি একজন ভালো মানুষ হতে চাই। আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?
হুমায়রা- অবশ্যই , কি করতে হবে বলেন।
আমি- জানেন হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি ভালো যে নিজের স্ত্রীর কাছে ভালো (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৯৭৭) তাই কি কি কাজ করলে আপনি খুশি হবেন তাই আমাকে বলে দিয়েন প্লিজ।
হুমায়রা- বাহ এতো সুন্দর হাদীস, একজন নারীকে ইসলাম এতো সন্মান দিয়েছে ,।
আমি উঠে গিয়ে একটি বক্স হুমায়রা হাতে দিলাম
আমি- আপনার জন্য ছোট উপহার !
হুমায়রা বক্স খুলে দেখলো , কিছু ফুল , তার সঙ্গে বড়ো করে লেখা , আই লাভ ইউ হুমাইরা, আর একটি সোনার চেন ।
হুমায়রা আবেগ পূর্ণ হয়ে বললো
হুমায়রা- এইটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।
আমার মনে হচ্ছে দরজার কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, তাই হুমাইরা কে চুপ থাকার জন্য হাত দিয়ে ইশারা করে, আমি দড়জা খুলে দিলাম ,দেখি ভাবীরা দাঁড়িয়ে আছে, আমি ঘড়ে এসে বসতে বললাম , সবাই ভৌ দৌড়ে চলে গেল , এদের কান্ড দেখে , আমি আর হুমাইরা অনেক হাসাহাসি করলাম ,
হুমায়রা- রাত তো অনেক হলো ঘুমাবেন না?
আমি- কেন একরাত না ঘুমালে হবে না, এতো দিন তো ঘুমিয়ে কাটালে? এখন রাত জাগার অভ্যাস করো!
হুমায়রা- কেন? রাত জেগে জেগে কি মশা মাছি মারবো?😒
আমি- শুধু মশা মাছি না, আরো অনেক কিছু করা যাবে,
হুমায়রা কিছু বললো না , আমি হুমাইরার হাত আমার হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম
আমি- আপনি কি জানেন যে আমাদের বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক আছে আছে?
হুমায়রা- হুম , আমরা যখন ছোট ছিলাম ,তখনি আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আম্মু বলতো আমরা দুজন সব সময় এক সঙ্গে থাকতাম আর সবসময় ঝগড়া করতাম ,
আমি- আচ্ছা শুধু কি ঝগড়াই করতম ,আর কিছু করতাম না?
হুমায়রা- মানে ,আর কি করতাম 😦,
আমি- কেন আপনাকে তো আমি বউ বলে ডাকতাম ,
হুমায়রা- আপনাকে কে বললো( লজ্জা পেয়ে)
আমি- আম্মু তো প্রায় বলে!!
হুমায়রা- কিন্তু , চিন্তা করেন বড়ো হোয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব ছিল , আমাদের বিয়ের কথা আম্মু আমাকে বলে প্রায় আজ থেকে এক বছর আগে!!
আমি- ও আল্লাহ , তাহলে আমাকে বলেন নাই কেন,
হুমায়রা- কেন ,মঝে মধ্যে কেউ আপনাকে মেসেজ করতো , কিন্তু আপনি এভয়েড করতেন 😔,
আমি- আপনি আমাকে মেসেজ করতেন?
হুমায়রা- আপনি আমাকে লাস্ট রিপ্লাই করেছিলেন এই বলে” দেখুন বোন আমি আপনাকে ভালোবাসি ও সন্মান করি, তাই এমন মেছেজ করবে না যাতে আপনাকে ব্লক করতে বাধ্য হই”
আমি- ও সরি , আসলে আপনি হয়তো জানেন , আপনি আমার মাহরাম ছিলেন না!
হুমায়রা- জি , আমার একটা অনুরোধ আছে, আপনি প্লিজ আমাকে তুমি করে বলবেন প্লিজ,
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে,
কথা বলতে বলতে ফজরের আজান হয়ে গেলো ,
আমি মজিদে যাওয়ার জন্য বের হলাম,
হুমায়রা- আপনি গোসল করবেন না ?
আমি- না , ঐ ভাগ্য আমার হয় নি , শুধু হাত ধরতেই ভয় করে আবার গোসল করবো!!🥴
হুমায়রা- আপনি না , একটু বেশি বেশি বলেন, যান তারাতাড়ি।
আমি নামাজ আদায় করে এসে একটু ঘুমানর চেষ্টা করলাম , কিন্তু এতো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছে এর ভিতর কি ঘুমানো যায়? তাই ভাবলাম বাইরে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করা উচিৎ,
চলবে………
Leave a Reply