গল্প:- বিয়ে ও বাসর পর্ব:-০১

গল্প:- বিয়ে ও বাসর

পর্ব:-০১

Author:-Hassab bin Ahmed.

গ্ৰামের পরিবেশ সত্যি অসাধারণ । গ্ৰামে যে সুখ শান্তি বিরাজ করে তা শহরে থেকে কখনো কল্পনাও করা যায় না । সেই সুখ উপভোগ করার জন্য গ্ৰামে আসতে হবে। গ্ৰামের যে বিষয়টি আমার সব থেকে ভালো লাগে তা হলো একজনের প্রয়জনে অন্যরা এগিয়ে আসে ‌। সব কাজ মিলে মিশে করে।  আর পরিবেশর কথা কি বলবো চারিদিকে  সবুজ আর সবুজ ,দেখলেই মনটা ভরে যায়।  বিশেষ করে আজকের দিনটা ভালো লাগছে রোদ নেই , মৃদু বাতাস বইছে, রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর কথা গুলো ভাবছিলাম।আমি এক অচেনা গ্ৰামে চলে এসেছি। আমাদের বাসাও গ্ৰামে , কিন্তু এখন ঐটাকে গ্ৰাম বলা যায় না। আমাদের গ্ৰাম টাও প্রায় আজ থেকে দশ বছর আগে এরকম সবুজ ময় গ্ৰাম ছিলো , কিন্তু এখন আর এই  মনরম দৃশ্য আর দেখা যায় না  অনেক উন্নত হয়ে গেছে  ‌। মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে ,  তাই আর হাঁটা হবে না , আবার এই গ্ৰাম আমি চিনিও না  আজ প্রথম আসলাম  । কিছু দিন আগে এখানে আমার মামা বাসা নিয়েছে । আম্মুর অনেক জোরাজুরিতে  ঘুরতে আসলাম। কথা ছিল মামা  আমাকে বাস স্টেশন থেকে নিয়ে আসবে , কিন্তু আমি আসতে দিলাম না , এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে দেখে যাবো বলে।  তাই অল্প অসুবিধা ও হয়েছে লোকজন কে ঠিকানা জিজ্ঞেস করে করে যেতে হচ্ছে।  

এই যা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো । এখন কি করি  বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত জ্বর আসবে । তার পর  এতো বস্তু ,বেগ ভর্তি  কাপড় চোপড় ।   দেখতে দেখতে বৃষ্টি পরা শুরু করলো দৌড়ে এক বাসায় ডুকে গেলাম , এই বাসায় একটাই ঘর , ঘরে বারান্দা নেই , দরজাও মনে হয় ভিতর থেকে লক করা। এখন কি করি , বৃষ্টির পানি থেকে কোন মতে নিজেকে রক্ষা করে ঘরের দেয়ালের সঙ্গে লেপ্টে আছি , বৃষ্টি ধিরে ধিরে বারছে , এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই ডাকার সিদ্ধান্ত নিলাম,

আমি:- বাসায় কি কেউ আছেন? (দরজায় নক করে)

      কোন প্রতেক্রিয়া নেই ,  আমি আবারও ডাকলাম ” বাসায় কি কেউ আছেন , যদি থাকেন তাহলে প্লিজ দরজা টা খুলুন “

ঐপাস থেকে:- কে ? কি চাই? ( মেয়ের কন্ঠ)

আমি:- আসসালামু আলাইকুম , আমার নাম সজিব, আপনি আমাকে চিনবেন না এই গ্ৰামে আমি নতুন , বাইরে অনেক বৃষ্টি  আপনি যদি দয়াকরে  ভিতরে  যেতে দিতেন অনেক উপকৃত হতাম।

ঐপাস থেকে:- ওয়ালাইকুমুস আসলাম , ওওও , আমি দুঃখিত আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না । ক্ষমা করবেন ।

আমি:- দেখুন প্লিজ এভাবে বলবেন না , আমাকে ভুল বুঝবেন না , আমি কোন প্রতারক নই বিশ্বাস করুন।

ঐপাস থেকে :- না না, আসলে বাসায় কেউ নেই , আমি একাই আছি আর আপনি আমার মাহরাম নন। তাই প্লিজ চলে যান এখান থেকে। 

আমি:- হুম ঠিক আছে, বুঝতে পারছি , আপনি  কি বলতে পারেন “রহিম উদ্দিনের” বাসা কোনটা, 

(জি মামার নাম রহিম উদ্দিন , তিনি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কিছু দিন আগেই এখানে ট্রান্সফার হয়েছে)

ঐপাস থেকে:-  জি এখান থেকে সামনে গিয়ে  প্রথমে বড়ো  “আহত গাছ” থাকা  যে বাসা আছে ঐ টাই স্যারের বাসা। 

আমি:- জাযাকল্লাহ , আপনি আমার আর একটু কাজ করবেন?

ঐপাস থেকে:- কি কাজ?

আমি:- আপনি আমার মোবাইল,ঘরি আর ব্যাগ টা রেখে দিন প্লিজ , এইগুলো পানিতে ভিজলে নস্ট হয়ে যাবে । আমি সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যায় ইনশাআল্লাহ। প্লিজ প্লিজ না করবেন না.

একটু নিরবতা …..

ঐ পাস থেকে:- আচ্ছা ঠিক আছে আমি দরজা খুলে দিচ্ছি আপনি ঘরের ভিতরে না টুকে ই রেখে চলে যাবেন , ঠিক আছে ।

আমি :-আচ্ছা ঠিক আছে। 

দরজা খুলে গেল কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না, আমি ব্যাগ,ঘরি আর মোবাইল রেখে দিলাম ঘরের ভেতর।  রেখে চলে যেতে লাগলাম , হঠাৎ মনে হল নামটা জেনে নেয়া উচিৎ ছিলো , পিছন দিকে চেয়ে দেখি দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি আবার দরজাটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম.

আমি:-এই যে শুনতে পাচ্ছেন? আপনার নামটা তো জানা হলো না । 

ঐ পাস থেকে:- কেন? আমার নাম দিয়ে আপনি কি করবেন?

আমি :- না মানে এতো গুলো বস্তু রেখে গেলাম , তাই আরকি ?

ঐ পাস থেকে:- আমার নাম জানতে হবে না,

এইটা রফিকুল ইসলামের বাসা, এই নামেই সবাই চিনবে।

আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে আসি তাহলে ।

আবার হাটা শুরু করলাম বৃষ্টির মাঝে , বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু ভালোই লাগে । কিন্তু আম্মু আব্বু ভিজতে দেয় না । বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসবেই।  এই আনন্দ ভরা মুহূর্ত গুলো সারা জীবন মনে থাকবে।  মুহূর্ত গুলো উপভোগ করছি আর মেয়েটার কথা ভাবছি কি মেয়ে রে বাবা  ঘরেও ঠুকতে দিলো না , ভাবতে ভাবতে “আহত গাছ”  থাকা বাসার সামনে এসে দাড়িয়ে গেলাম মনে হয় এই বাসাই।

বাসায় ঢুকে দরজায় টোকা দিতেই মামি দরজা খুলে দিল । আমি ভিজে একাকার হয়ে গেছি , এইটা দেখে মামি মামার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে , মামা কেন আমাকে আনতে জায়নি। 

আমার মামা মামী অনেক ধার্মিক , মামি আমাকে অনেক ভালোবাসে তারপরও সবসময় আমার সামনে পর্দা করে চলে ।

মামি: সজিব তুমি তারাতাড়ি গোসল করে নাও , নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে । আর তোমার কাপড় আনো নাই ?

আমি: বৃষ্টির জন্য এক বাসায় কাপড়ের ব্যাগ রেখে এসেছি ।

মামি: আচ্ছা ঠিক আছে , তুমি আরিফের কাপড় ব্যবহার করো ।

আরিফ আমার মামাতো ভাই , আমার সঙ্গে অনেক মিল ওর , আমি আরিফর রুমে গিয়ে কিছু কাপড় নিলাম কিন্তু আরিফ নেই । তারপর পর গোসল করে আরিফের রুমে আসলাম , সঙ্গে সঙ্গে মামির ডাক

মামি: সজিব এসো ভাত খেয়ে যাও।

ভাত খাওয়ার সময মামর সঙ্গে অনেক কথা হলো, খাওয়া শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম

আমি: মামি আরিফ কোথায়?

মামি: কলেজে গেছে , আসবে এখন , তুমি গিয়ে রেস্ট নাও। 

আমি গিয়ে আরিফের রুমের পাশের রুমে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতে লাগলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারলাম না। কারো ঢাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল, তাকিয়ে দেখি আরিফ ডাকছে!!

আরিফ- ভাইয়া, উঠো মাগরিবের নামাজের আজান দিবে এখন, নামাজে যাবে না?

    আমি উঠে আরিফের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলাম।

আরিফ- তুমি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নাও , বেশি সময় নেই ।

আমি- তুই যা আমি জাবো না।

আরিফ- আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে। এখন সময় নেই,তাই তোমাকে মাত্র। দুটো আয়ত বলি , তাঁর পরেও যদি তোমার মনে হয় যে নামাজ পরতে না গেলেও চলে তাহলে যাওয়ার দরকার নেই।

আমি- ঠিক আছে বল।

আরিফ- আচ্ছা ঠিক আছে শুন তাহলে।

১.কোন জিনিস (কাজ) তোমাদেরকে (সাকার) জাহান্নামে নিয়ে এল? তারা বলবে আমরা নামাজিদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না। (সুরা আল-মুদ্দাচ্ছির : আয়াত ৪২-৪৩)

২.সুতরাং দুর্ভোগ (ওয়াইল নামক জাহান্নামের কঠিন শাস্তি) সেসব নামাজ আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের নামায সম্পর্কে উদাসিন।’ (সুরা মাউন : আয়াত ৪-৫)

আমি- নামাজের এতো গুরুত?

আরিফ- এখন বলো যাবে কি না?

আমি- তুই দ্বারা আমি অজু করে আসি!

   তারপর দুজনে মছজিদ গেলাম। অনেক দিন পর নামাজ পরলাম! মনের ভেতর একটি প্রশান্তি কাজ করছে। মছজিদ থেকে বের হয়ে বল্লাম

আমি- আচ্ছা আরিফ আমার বস্তু গুলো আনতে হবে না!

আরিফ- পুরো দিন তো ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলে, এখন রাত করেই যেতে হবে কি আর করার! কোন বাসায় রেখে এসেছিলে?

আমি- তোদের বাসার পাশেই ,রফিকুল ইসলামের বাসায়।

আরিফ- হয়েছে তাহলে!! আর বাসা খুঁজে পাওনি,  আর যাওয়ার দরকার নেই??

আমি- কেন কি হয়েছে? ওরা কি আমার জিনিস ফিরিয়ে দিবে না?

আরিফ – কাল সকালেই বুঝতে পারবে!

আমি- আবার কাল কেন? এখুনি বল!

আরিফ- এখন বলা যাবেনা! তুমি জানো তোমাকে হঠাৎ আমাদের বাসায় কেন পাঠিয়ে দিলো??

আমি- ঘুরতে!

আরিফ কিছু না বলে সুধু মুচকি হেসে যাচ্ছে। আমি তো এখন একটু ভয় পেতে শুরু করলাম ।

আমি- একটু খুলে বল তো কি হইছে?

আরিফ- কাল সকালেই বুঝতে পারবে।

আমি- আল্লাহ গো আবার কাল সকাল। আমি এতো চাপ নিতে পারি না । এই কাল সকাল কখন আসবে ?

আরিফ- কাল সকালেই আসবে!( হেসে হেসেই উত্তর দিল)

   এখন অপেক্ষা শুধু কাল সকালের। অনেক চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছি কাল সকালে কি হতে পারে। কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না

      সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ১০ টা বাজে।  বিছানা ছেড়ে উঠে বাহিরে গিয়ে আমি তো অবাক , আম্মু আব্বু মামার সঙ্গে গল্প করছে । আমি আম্মুর পিছনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তোমরা এখানে??

আম্মু: কেন আমি কি আমার ভায়ের বাসায় আসতে পারি না?

আমি : তোমার যখন ইচ্ছা আসতে পারো। আসলেই যখন তাহলে আমার সঙ্গে আসতে পারতে।

আম্মু:- তুই ফ্রেস হয়ে আয় তোর সঙ্গে কথা আছে।

আমি ফ্রেস হয়ে আম্মুর পাশে গিয়ে বসলাম।

আমি: বলো কি বলবে!

আম্মু: তোর বিয়ের জন্য তোর মামা একটি মেয়ে দেখেছে। মেয়ের নাম হুমাইরা বিনতে আনিছ, মেয়েটা অনেক ধার্মিক অনেক ভালো মেয়ে , তাই আজ তোকে নিয়ে মেয়েটাকে দেখতে যাবো। কিছু খেয়ে রেডি হয়ে নে।

আমি: আমাকে তাহলে মিথ্যা কথা বলে এইখানে নিয়ে আসলে!!

আম্মু: সত্যি কথা বললে তুই হয়তো আসতি না। আরো একটি কথা হুমাইরার মা বাবা কেউ নেই,ওর মামা মামীর কাছেই থাকে।

                 কি আর করার মেয়ে দেখতে যাচ্ছি , কিন্তু সমস্যা হলো আমরা ওই বাসায় প্রবেশ করছি যে বাসায় কাল আমার বস্তু গুলো রেখে গিয়েছিলাম । আমার কাছে এখন কিরকম জেনো স্বপ্নর মতো লাগছে।

এখন হুমাইরা আর আমাকে একা কথা বলতে দিয়েছে। দুজনেই নিরব কারো মুখে কোন কথা নেই । এই প্রথম মনের ভেতর ভিন্ন রকম একটি ফিলিংস কাজ করছে, আমার গলা শুকিয়ে গেছে । তারপরও আমি প্রথম ভয় ও লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল – ‘এক গ্লাস পানি হবে’

চলবে…….

( বি:দ্র: – অনুমতি না নিয়ে কপি করা নিষেধ। অনেকেই আমার গল্প নিজের নামে পোস্ট করেন , ইসলামে এইটা সম্পূর্ন হারাম, ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ) 


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *