গল্প:- বিয়ে ও বাসর
পর্ব:-০২
Author:-Hassab bin Ahmed.
হুমায়রা উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলো। আমি পানি খেয়ে বললাম –
আমি: আমি জানিনা এখন আমাদের কোন বিষয়ে কথা বলা উচিৎ, যাইহোক আমার নাম সজিব আহমেদ।
হুমায়রা: তাহলে কি কাল আপনি…?
আমি: জি! বৃষ্টির সময় আমি ছিলাম। কিন্তু আমি সত্যি জানতাম না যে আমাদের বিয়ের কথা চলছে!!
হুমায়রা: কাল আপনাকে ঘরে ঢুকতে দেইনি তার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি পর্দা মানার চেষ্টা করি।
আমি: আমি বুঝতে পারছি!!
হুমায়রা: ….. ( নিশ্চুপ)
আমি: আমার মনে হয় আমার বিষয়ে আপনার কিছু জানা উচিৎ! আমি Bsc ও Msc গোয়াহাটি উনিভার্সিটি থেকে শেষ করেছি।
আমার বন্ধুরা মনে করে আমি অনেক আনস্মার্ট ওদের মতো স্মার্ট না। আর আমারও তাই মনে হয়।
কলেজে এক মেয়েকে পছন্দ করতাম, আমার ক্লাছমেট ছিলো মেয়েটা, অনেক চেষ্টা করেছি কথা বলার জন্য কিন্তু সাহস করে বলতে পারি নাই। ভালোই হয়েছে পরে জানতে পারলাম ওর আগে থেকেই দুটো বয়ফ্রেন্ড ছিলো।
বন্ধুদের সংগে স্মোকিং ও করেছি। এই কথা গুলো আমি তো আমার কোন ফ্রেন্ডের সাথেও সিয়ার করি নাই , কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিল আপনাকে তো বলতেই হবে!!
হুমায়রা মন দিয়ে আমার কথা শুনে যাচ্ছে।
আমি: আম্মু বলেছিলো আপনি পড়তে ভালোবাসেন। আপনার পছন্দের বই কোন গুলো।
হুমায়রা: বন্ধন, ডাবল স্ট্যান্ডর্ড , বেলা ফুরাবার আগে,ফেরা, তুমি ফিরবে বলে।
আমি: আপনি কি এই বিয়েতে রাজি এখন প্রায় দেখা যায় বাসা থেকে অনেক মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় কিন্তু পরে আর তাদের সংসারে কেউ সুখী হতে পারে না।
হুমায়রা মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,সে রাজি।
আমি: আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন!!
হুমায়রা মাথা নিচু করে বসে আছে কিছু বলছে না।
আমি : আপনার কোন প্রশ্ন নেই?
হুমায়রা মাথা নাড়িয়ে না করলো।
আমি: ঐ মেয়েটার বিষয়ে জানতে চাইবেন না??
হুমায়রা: সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।
আমি: আপনি চাইলে আমরা আরো দুই একবার দেখা করতে পারি। তাহলে এখন উঠি।
হুমায়রা: জি যাওয়ার সময় আপনার বস্তু গুলো নিয়ে যাবেন।
বাসায় ফিরার পর থেকেই সবাই আমার মতামত জানতে চাচ্ছে, যদিও আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না,তার পরেও না করার কোন কারণ খুঁজে পেলাম না, আর মেয়েটার চেহারায় একটা মায়া আছে , যেখানে আমি আটকে গেছি। সময় পার হতে লাগলো আমাদের বিয়েও ঠিক হয়ে গেলো, দেখতে দেখতে বিয়েও হয়ে গেলো। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার পর আজ আমার বাসার রাত। এখন রাত ১১ টা বাজে, ভয়ে ভয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম!! বউ খাটে বসে আছে , আমার বউ এর পরনে আছে সোনালী পাড়ের লালচে খয়েরী শাড়ি। গলায় ছোট একটা হার, কানে দুল, হাতে খয়েরী কাঁচের চুড়ি আর একজোড়া সোনার বালা। সাজুগুজু বলতে চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা খয়েরী লিপস্টিক। এক দেখাতেই প্রেমে পড়ে জাবার মতো অবস্থা। অনেক সময় ধরে দুজনেই নিরবতা পালন করছি,তাই আমি নিরবতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করলাম।
আমি: আপনার নাম টা যেনো কি ছিল??
বউ: বিয়ের আগে কি আপনি আমার নাম শোনেন নাই, নাম না জেনেই বিয়ে করে ফেলেন!!
আমি:না মনে আমি জানি আপনার নামটা।
বউ: জানলে আবার জিজ্ঞেস করলেন ক্যান?
আমি: কি দিয়ে কথা শুরু করব তা ভেবে পাইতেছিলাম না। তাই ভাবলাম নাম জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমেই শুরু করি!!
বউ: আমার নাম হুমাইরা বিনতে আনিছ। আপনার নামটা কি??
আমি: কেন আপনি আবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছেন কেন, আমার নামতো আগেই বলেছি??
বউ: কেন আপনি আমার নাম জিজ্ঞেস করতে পারলে আমি কেন আপনার নাম জিজ্ঞেস করতে পারবো না!!
আমি: অবশ্যই পারবেন!!
বউ: বলেন তাহলে!
আমি: ঠিক আছে শোনেন আমার নাম সজিব আহমেদ। কয়েক ঘন্টা পূর্বেও আমি সিঙ্গেল ছিলাম। আজকেই বিয়ে করলাম। বউয়ের নাম হুমাইরা বিনতে আনিছ। আজকেই আমার বাসর রাত.
বউ: থাক আর বলতে হবে না আপনি যে কথা বলার উপরে ডাবল পিএইচডি লাভ করেছেন সেইটা আপনাকে দেখেই বুঝছি
আমি: আমার কি দোষ, আপনি তো বলতে বললেন!!
বউ: হুম হয়েছে , ইশার নামাজ পড়েছেন??
আমি: না
বউ: কেন?
আমি: এই তো সারা দিন ব্যস্ত ছিলাম।
বউ: আমিও পড়তে পারি নাই ,চলেন এক সাথে পড়ি।
আমি: এখন আর না পারি , একেবারে কাল থেকে শুরু করি!!
বউ: আপনি কি কোরআন ও সহীহ হাদীস মানেন??
আমি: অবশ্যই কেন মানবো না,
বউ: আচ্ছা তাহলে আমি কোরআন ও হাদিস থেকে নামাজের কিছু গুরুত্ব আপনাকে বলি , তাঁর পরেও যদি আপনার মনে হয় যে আজ নামাজ আদায় না করলেও চলবে তাহলে আপনি কাল থেকে শুরু করবেন ঠিক আছে!!
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে বলো দেখি!!
বউ: হুম, মন দিয়ে শুনুন-
১.যারা সালাত আদায় করে না, তাঁরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করুন- কে উত্তম? আমি নাকি শয়তান? আপনি জানেন ইবলিশ অত্যন্ত ইবাদত গুজার একজন ছিলো। আল্লাহ যখন ফেরেস্তাদের আদমের প্রতি সাজদাবনত হতে আদেশ দিলেন ইবলিশ তা প্রত্যখান করে বসলো। কেবল একটি সাজদা করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে ইবলিশ হয়ে গেল সবচাইতে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।
৫ উয়াক্ত মিলিয়ে ১৭ রাকাত সালাত সর্বমোট ৩৪টি সাজদা। কাজেই যে ব্যক্তি একদিন সালাত ছেড়ে দেয় সে ৩৪ টি সাজদা ছেড়ে দেয়। ইবলিশ কেবল একটি সাজদার আদেশ অমান্য করেছিলো। একটি মাত্র সেজদার আদেশ অমান্য করে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়েছিলো সে। আর যে ব্যক্তি দৈনিক সলাত আদায় করে না,সে ৩৪ টি সাজদার বিধান কে অবজ্ঞা করে। তাহলে বলুন কে নিকৃষ্ট? যে দিনে ৩৪ বার সাজদা ছেড়ে দেয়,ওই ব্যক্তি? নাকি যে একবার ছেড়ে দেয় সে?
২.সবকিছুর মূল হোলো ইসলাম এবং সালাত হলো তার স্তম্ভ(খুঁটি)( তিরমিজি-২৬১৬)
৩. সালাত এমন একটি আমল যার আদেশ দেওয়ার জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সাত আসনের ওপর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।(বুখারী-৩৪৯)
৪. কাফির ও মুমিনের মাঝে পার্থক্য হলো সালাত বর্জন। যে সালাত ছেড়ে দিলো,সে কুফরী করলো।( সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৭৮,১০৮০)(আবু দাউদ, মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিজি)
৫.যে কেউ সালাতুল আসর ত্যাগ করবে,তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।( মুনযিরি,আত-তারগীব-১/২২৬)
৬. আবদুল্লাহ ইবনে উম্মু মাখতুম রাদিআল্লাহু আনহু সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিচের আয়াত নাযিল করেছিলেন, ” তিনি ভ্রৃ- কুশ্চিত করলেন এবং ফিরিয়ে নিলেন।(সূরা আবাসা- ৮০:০১)
আল্লাহ যার জন্য কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা-কে তিরস্কার করলেন , সেই আবদুল্লাহ ইবনে উম্মু মাখতুম রাদিআল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে গেলেন এবং বললেন , হে আল্লাহর রাসূল! আমার দেহ দুর্বল। আমার হাঁটতে সমস্যা হয়, আমি অসুস্থ, আমি বৃদ্ধ । আমি কি বাড়িতে সালাত আদায় করতে পারি?
তিনি বলেননি, আমি কি সালাত ছেড়ে দিতে পারি? তিনি কেবল বলেছেন আমি কি বাড়িতে সালাত আদায় করতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনার মসজিদে সালাত আদায় না করার ব্যাপারে আমি কোন অজুহাত খুঁজে পাচ্ছি না। ( আবু দাঊদ: ৫৫২)
৭.তাবে ডান দিকের লোকেরা ছাড়া।যারা জান্নাতে অবস্থান করবে। সেখানে তারা অপরাধীদের জিজ্ঞাসা করতে থাকবে কীসে তোমাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করল? তারা (অপরাধীরা) বলবে আমরা সালাত আদায় করতাম না।(সূরা আল- মুদ্দাসসির আয়াত নং- ৩৯-৪৩)
৮.সালাত আদায় না- কারীদের জন্য আরও একটি আবাসস্থল হলো সাকার। সাকার হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকা।যাকে সাকারে পাঠানো হবে তার কোন দেহাবশেষও অবশিষ্ট থাকবে না।(সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত নং-২৬-৩০)
৯. কুরআনের আরেক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেন” যখন তাদেরকে বলা হয়,নত হও, তখন তারা নত হয় না। সেদিন মিথ্যারোপকারীদের জন্য ওয়াইল হবে। (সূরা মুরসালাত আয়াত নং ৪৮-৪৯)
এসব শাস্তি শুধু সালাতের ব্যাপারে অবহেলা, সঠিকভাবে, সময়মতো সালাত না পড়ার কারণে।
১০. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘যে ব্যক্তি যথাযথ ভাবে সালাত আদায় করলো না,তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন নূর,প্রমান এবং মুক্তি মিলবে না।( ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ: ১৪৬৭)
১১. যে সালাত আদায় করে না সে ফেরাউন,হামান,কারুন ও উবাই বিন খালাপ দের সাথে থাকবে।( ইবনে হিব্বান-১৪৬৭)
১২. দিনটি ছিল সোমবার।এ দিনেই রাসূল “ﷺ” দুনিয়া ছেড়ে তার রবের কাছে চলে যান। ইন্তেকালের আগ মুহূর্তে তিনি আমাদের জন্য কি উপদেশ দিয়েছিলেন, জানেন !! আনাস (রা:) বলেছেন, নবী “ﷺ” সর্ব শেষ যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা হলো সালাত, সালাত।
আপনার পিতা মাতা মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যে নির্দেশটি দিয়ে যাবেন আপনি সেটাকে অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেবেন, তাই না? তাহলে চিন্তা করুন নবী সর্ব শেষ যে কথাটি বলে গেছেন সেটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একবার চিন্তা করুন, নবী “ﷺ” তখনি সালাত, সালাত শব্দ গুলো উচ্চারণ করেছিলেন তখন মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন তিনি তবুও শেষ ওসিয়ত হিসেবে আমাদের জন্যে তিনি সালাতের নির্দেশ দিয়ে যান। আর আপনি নবীজীর সেই শেষ নির্দেশ পালনে অবহেলা করছেন, অলসতা করছেন?????
এবার বলেন এখন কি নামাজ পড়বেন না কি। কথা গুলো শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। মনের ভিতর কিরকম একটা ভয় কাজ করতে লাগলো।
বউ: কি হলো মুখটা এরকম করে আছেন কেন???
আমি: না মনে আমি ভাবছি তাহলে আমি যে এতো দিন নামাজ পড়ি নাই তাহলে আমার কি হবে।
বউ: মন খারাপ করবেন না , আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, আল্লাহ নিশ্চয় ক্ষমা করবে। তৌবা করেন।
আমি: হুম ,চলো নামাজ টা পড়ে আসি ।
নামাজ শেষে আমি হুমায়রা কে বললাম ” চলো এক যায়গায় যাই”
বউ: কোথায়??
আমি: ছাদে চাঁদ দেখতে যাবো আজ পুর্ণীমা। এখন সবাই ঘুমিয়ে গেছে কেউ বুঝতে পারবে না।
হুমায়রা: হুম যাবো কিন্তু একটি শর্ত আছে!!
আমি: কি শর্ত??
হুমায়রা: আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
আমি আর কিছু না বলে বউ কে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের দিকে হাঁটা দিলাম।
হুমায়রা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বল্ল কি সুন্দর তাইনা??
আমি হুমায়রার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম “হুম অনেক সুন্দর”
হুমায়রা: আমি চাঁদের কথা বলছি!!
আমি: আমি আমার চাঁদের থেকে সুন্দর বউ এর কথা বলছি।
হুমায়রা লজ্জা পেয়ে আমার বুকেই মুখ লুকিয়ে ফেলল।
………… সমাপ্ত………..
Leave a Reply