নিল প্রজাপতি
পর্ব:০২
লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!
আমার কথা শুনে মেয়েটি তার মুখ থেকে এক পলকের জন্য নিকাব সরিয়ে নিলো।
সময় যেন থমকে দাঁড়ালো, আমার চার পাশে থাকা সব দৃশ্য যেন মলিন হয়ে পরলো, আমার চোখ পরল আরেক জোড়া চোখের উপর, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, মায়া ভরা দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, আমি এক পলকে তাকিয়ে আছি মিষ্টির দিকে। অজানা সব অনুভূতি তে ভেসে যাচ্ছে আমার হৃদয়,!
মিষ্টি: কি হলো কোথায় হাড়ালেন?
আমি: আপনি? আমি আসলে কখনোই চিন্তা করি নাই! আপনি, আমি সরি, আমি রাগ করতে চাই নাই, আমি সত্যি সরি!
মিষ্টি: আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি যান , আমরা বাস দিয়ে চলে যেতে পারবো!
আমি: কি হয়েছে, আমার সঙ্গে যাবেন না কেন?? আমি আবার কি করলাম!!
মিষ্টি: আমি কাল আপনার কাছে অনুমতি নিয়ে বিয়ে খেতে যাচ্ছি, আর আপনি আমাকে একবার জানানর ও প্রয়োজন মনে করলেন না??
আমি: সরি, আসলে আমার উচিত ছিল আপনাকে বলার, আসলে আপনি আপনার কথা বলেই ফোন রেখে দিয়েছিলেন,ছো আর বলা হয়নি, এবারের মতোন মাফ করে দিন আর কখনো এরকম হবে না।
মিষ্টি: সত্যি তো।
আমি: জি তিন সত্যি।
মিষ্টি: আচ্ছা ঠিক আছে, চলেন তাহলে।
কিছু সময় পর বিয়ে বাড়ীতে উপস্থিত হলাম! আমাদের দেখে রাজু এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা পরলো!( রাজু তো আর জানেনা যে আমরা স্বামী স্ত্রী)
রাজু: মিষ্টি আসতে তো কোথাও অসুবিধা হয়নি!
মিষ্টি: এমনে কোন অসুবিধা হয় নাই, কিন্তু তোমার ফ্রেন্ড আমাকে অনেক বিরক্ত করেছে!
আমি: আমি আপনাকে বিরক্ত করেছি! কি উল্টা পাল্টা কথা বলছেন? আমি আপনাকে কখন বিরক্ত করলাম??
রাজু: আচ্ছা এসব বাদ দে! চল ভিতরে চলে!
ভিতরে গিয়ে রাজুর বাবা মার সাথে দেখা করলাম! রাজুর বাবা মা আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাজুর আজকে গায়ে হলুদ!
রাজু আমাকে আমার থাকার রুম দেখিয়ে দিলো!
রাজু: আচ্ছা তুই এখন রেস্ট নে! কিছু সময় পর আমার বিয়ের কাপড় কিনতে যাবো!
আমি:এখনো কাপর কেনা শেষ হয় নাই?
রাজু: না আরো কিনতে হবে!
বলেই চলে গেল!
আমি শুয়ে আছি! কিছু সময় পর মিষ্টি আমার রুমে আসলো!
মিষ্টি: আপনি কি বিয়ে বাড়ীতে শুয়ে থাকতে আসেছেন?
আমি: আরে আপনি, না আমি আপনাকে দেখতে এসেছি!
মিষ্টি: আরিফ বললো, আপনি আমাকে আসতে বলছেন? কি বলবেন বলুন?
আমি: কি বলবো মানে, আমি কি আমার স্ত্রী কে আসতে বলতে পাড়ি না?
মিষ্টি: কিন্তু,এইটা বিয়ে বাড়ী, অনেক লোক,কে কি ভাবে বসে!
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে! এবার নেকাব টা খুলেন!
মিষ্টি: এখানে সম্ভব না, হঠাৎ করে কেউ ভিতরে আসতে পারে!
আমি কিছু বলার আগেই, রাজু ভিতরে আসলো,
রাজু: আরে মিষ্টি তুই এখানে কেন?
মিষ্টি: ঐ তো সকালো তোমার বন্ধু কেন আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলো, তাই জানতে এসেছিলাম?
রাজু মিষ্টি কে একটু দূরে নিয়ে জিজ্ঞাস করলো
রাজু: আসিফ কি তোকে সত্যিই বিরক্ত করেছে! ও কিন্তু এরকম না! আমি আসিফের সাথে অনেক দিন ছিলাম! ও অনেক ভালো একটা ছেলে!
মিষ্টি: কিন্তু আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে!
রাজু: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি দেখতেছি আয়!
রাজু আর মিষ্টি আমার পাশে এসলো!
রাজু: আসিফ তুই আমাকে ভুল বুঝিবি না প্লিজ, আমি তোকে ভালো করেই চিনা! তাঁর পড়েও প্রশ্নটা করছি! তুই কি সত্যি মিষ্টি কে কিছু বলেছিলি?
আমি: মিষ্টি কে?
রাজু: এই তো মিষ্টি!( মিষ্টি র দিকে তাকিয়ে বললো)
আমি: জি আমি ওনার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি!
রাজু: কিন্তু কোন? আচ্ছা ঠিক আছে,তুই মিষ্টি কে একটা sorry বল!!
আমি: এখন আমি sorry বলবো না,কারন আমি সকালে উনার কাছে ক্ষমা চেয়েছে,আর উনি ক্ষমা করেছে!
রাজু: মিষ্টি আসিফ কে কি তুই ক্ষমা করে দিয়েছিস?
মিষ্টি: জি!
রাজু: তাহলে তো হয়েই গেলো, আর তো কোন প্রবলেম নেই?
আমি: আমার একটা প্রবলেম আছে!
রাজু: আবার কি প্রবলেম??
আমি: আমি সকালে এই ভদ্রমহিলার সঙ্গে ভুল করেছিলাম, তাঁর পড় আমি উনার কাছে ক্ষমা চেয়েছি,আর উনি আমাকে ক্ষমাও করেছিলো! তাঁর পড়েও আবার ঐ একি ভুলের জন্য আমাকে দোষারোপ করেছে এখনো, এইটা ঠিক না ভুল!
রাজু: অবশ্যই ভুল !
মিষ্টি: তাহলে আমার ভুলের জন্য কি করতে হবে স্যার!
আমি: আমার মাথা টিপে দিতে হবে!!
রাজু: এই আসিফ তুই কি পাগল হয়ে গেলি, কাকে কি বলছিস তুই এইসব!! তুই আমার বোনকে এরকম কথা কিভাবে বলতে পারিস?
মিষ্টি: রাজু ভাইয়া তুমি থামো তো উত্তেজিত হয়ো, না, আমি রাজি!!
রাজু: মিষ্টি কি যাতা বলছিস!! তুই ও কি পাগল হয়ে গেলি,!
রাজু একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে, এখন আর বেশি মজা করা যাবে না!
আমি: আচ্ছা রাজু,এই সব বাদ দে! আমি sorry.
রাজু: জি এই সব বাদ,চল মার্কেটে যাবো!
আমি: রাজু একটু কথা আছে!
রাজু: আবার কি হলো? বল!!
আমি: আচ্ছা, তুই যে শেরওয়ানি কিনতে চাচ্ছিস তার দায় কোচ?
রাজু: ১৫ হাজার, কেন কি হয়েছে?
আমি: it’s about finances… তুই জানিস তোর বিয়েতে কোত খরচ হয়েছে? আন্টি আমাকে বল্ল, ইতিমধ্যে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে!!. Raju the marriage industry is a billion dollar industry. এই ছেলে মেয়ের বিয়ের জন্য কতো বাবা যে লোন নেয় তার হিসাব নেই, পুরো জীবনের কামাই এই এক দিনে খরচ করে ফেলে, রাজু তোর চিন্তা করা উচিৎ, marriage isn’t about just one day, পুরো জীবনের প্রশ্ন,so.. instead of focusing on this one day.তোদের সামনের জীবনের কথা চিন্তা করা উচিৎ, তুই যতো খুশি টাকা খরচ কর তারপরও কেউনা কেউ এসে কিছু না কিছু ভুল ধরবেই,তো এতো টাকা খরচ করার মানে কি? কার জন্য? কি জন্য বাবা মাকে এই বয়সে টাকার জন্য চিন্তায় ফেলতে হবে?
রাজু: হুম, ঠিক বলেছিস, আমি এই বিষয়ে ভাবিই নাই!
আমি: চল আমি তোকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় ভালো একটা শেরওয়ানি কিনে দিবো!
রাজু: আচ্ছা ঠিক আছে,চল
তাঁর পর দুজনে বাজারে গিয়ে কিনা কাটা করে বাসায় ফিরার সময় একটা গ্লাসের সঙ্গে আমার হাত টা লেগে কেটে গেল, কি আর করা ব্যান্ডেজ করে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা লাগে গেল, হঠাৎ মিষ্টি কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে?” হুমায়রার অস্থিরতা দেখে তো রাজু আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
মিষ্টি: আপনার হতে কি হয়েছে?
আমি: কিছু না একটু কেটে গেছি!
মিষ্টি: কখন? কোথায়? কিভাবে? ডাক্তার দেখিয়েছেন?
আমি: আপনি শান্ত হন, এতো অস্থির হয়েন না, কিছু হয় নি শুধু একটু খানি কেটে গেছে!!
মিষ্টি: কিছু হয় নাই মানে! হাত কেটে গেছে তাও কিছু হয় নাই( কান্না জড়িত কন্ঠে)
আমি: আরে কান্না করারা কি আছে? ডাক্তার দেখিয়েছি! ইনশাআল্লাহ রতের ভিতর ঠিক হয়ে যাবে!
আমাদের দেখে তো রাজুর আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা হয়েছে! রাজু ওঁর মা কে বললো
রাজু: আম্মু,এরা কি শুরু করলো, তাহলে মিষ্টির এতো পর্দা করার মানে কি দারালো!
রাজুর আম্মু: আরে গাধা, ওঁর দুজন স্বামী স্ত্রী!( বলেই চলে গেল)!
রাজু তো অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে
আমি: রাজু মুখ টা বন্ধ কর ,না হলে মশা ডুকবে!
রাজু: মানেহ,তোরা দুজনে আমাকে এভাবে বোকা বানালি?
রাজুর কথা শুনে আমার সবাই হেসে উঠলাম! এর ভিতর মাগরিবের আজান দিলো! সবাই নামাজ আদায় করতে গেলাম!
চলবে……
Leave a Reply