নিল প্রজাপতি,পর্ব:০৩

নিল প্রজাপতি

পর্ব:০৩

লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!

আমি মাগরিবের নামাজ পড়ে, আমি আর আরিফ গল্প করতেছি, এর ভিতর রাজুর ছোট বোন চলে আসলো, কিছু সময় পর দেখি হুমায়রা এক বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে আমার পাশে এসে বসল!

মেয়েটা আমার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে  বললো ” ফুপি জান এই আংকেল আমার কি হয়?

মিষ্টি: আপনার ফুপা হয়।

মিষ্টি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো ” এইটা রাজুর বড় বোনের মেয়ে।

আমি: মামনি আপনার নাম কি?

মেয়েটি: আমার নাম হুজাইফা।

আমি: বাহ, অনেক সুন্দর নাম, তা আপনি কোন ক্লাছে পড়েন ?

হুজাইফা: ক্লাছ 4 এ পড়ি।

আমি: আচ্ছা, আমাকে একটা কবিতা শুনান তো দেখি!

হুজাইফা: কি কবিতা, বলবো, ইংরেজি না অসমীয়া?

আমি: অসমীয়া ই বলেন অনেক দিন ধরে অসমীয়া কবিতা শুনাও হয় না।

হুজাইফা: 

                        লঘোন 

                                    কবি- নৱকান্ত বৰুৱা

একোকে নেখাওঁ আজি 

             একেবাৰে ভোক নাই,

আছে যদি আধা সেৰ 

             চিৰা দিবি ভাল চাই!

দৈ মোক নেলাগেই

             গাখীৰৰ সৰ পালে,

খৈজুৰিৰ গুৰ নেকি?

             লৈ আহ এইফালে!

নাই যদি মালভোগ

            জাহাজী কলকে আন,

আৰু একো নেলাগেই

            এয়ে হ’ব জলপান!

আজি যদি অহা নাই

          ভীম ছিং পালোৱান,

তাৰ বাবে ভাজি থোৱা

          দুটা মান আলু আন!

পাপৰ আছিল বোলে 

          আঙঠাত সেঁক চোন,

আচাৰো ওলাব পাৰে

           বিচাৰিলে চুকে কোণ!

ৰৌ মাছ ভাজা আছে?

          তাৰো দুচকল দে,

এয়ে হ’ব লঘোনত

            আৰু একো নেলাগে!

আমি: বহ অসাধারণ, অনেক সুন্দর হয়েছে!

রাজুর বোন বল্ল: ভাইয়া আপনি একটা কবিতা বলেন আমরা সবাই শুনি!

আমি: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি একটা বাংলা কবিতা বলি…

#ছোট্ট_শিশুর_প্রশ্ন

✍কাজী মারুফ

মাগো তুমি বলতে পারো

আকাশ কেনো নীল?

তারাগুলো রাতে কেনো

করে যে ঝিলমিল?

সূর্য ওঠে দিনের বেলা

রাতে কেনো চাঁদ?

খাবার মাঝে পাই কেনো মা

নানারকম স্বাদ?

গুড়ুমগুড়ুম মেঘের ডাকে

লাগে কেনো ভয়?

পাহাড়গুলো রয় দাঁড়িয়ে

হয় না কেনো ক্ষয়?

কে দিলো মা ডাবের মাঝে

মিষ্টি মধুর জল?

আম পেয়ারা কাঁঠাল পেঁপে

মজার মজার ফল?

বৃষ্টিগুলো কোথায় থাকে

জানার ইচ্ছে হয়?

খুঁটি ছাড়া আকাশটা মা

কেমন করে রয়?

কে সাজালো এমন করে

কোন সে কারিগর?

জলদি করে প্রশ্নগুলোর

দাও না মা উত্তর?

ছোট্ট শিশুর প্রশ্ন শুনে

জবাব দিলেন মা’য়

‘ওরে আমার মানিক যাদু

আয় না বুকে আয়।’

এই দুনিয়ার সকল কিছু

যিনি করেন দান

তিনি হলেন, “অদ্বিতীয় 

আল্লাহ মেহেরবান”।

কবিতা শুনে সবাই হাত তালি দিচ্ছে , 

মিষ্টি: বাহ আপনি তো অনেক ভালো কবিতা বলতে পারেন!

আমি: এই তো টুক টাক!

আরিফ: ভাইয়া তখন আমাকে যে ধাঁধা ধরেছিলেন ঐ ধাঁধা টা এখন সবাইকে ধরুন তো দেখি!

আমি:সবাই মন দিয়ে শুনবে! 

   ধরো এক ছেলে আর এক মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে,

হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো, দুজনে দৌড়ে এক সমানে এক ঘরে উঠলো 

এখন বলো দুজনের মাঝে কে বেশি বুদ্ধিমান? ছেলেটি বেশি বুদ্ধিমান না মেয়েটা বেশি বুদ্ধিমান?

সবাই ভাবতে ভাবতে হাত উঠিয়ে দেলো, কেউ বলতে পারছে না!

আমি: তাহলে কি কেউ বলতে পারবে না?

মিষ্টি: আমি পাড়বো!

আমি: বলেন!

মিষ্টি: যে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আগে ঘরে গিয়েছে সে বেশি বুদ্ধিমান!

আমি: দুজনে এক সমানে ঘরে ঢুকেছিলো!

মিষ্টি: হুম……. তাহলে পড়বো না, আপনি বলেন!

আমি: আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলছি, ছেলেটি বেশি বুদ্ধিমান?

রাজুর বোন: কিভাবে ভাইয়া,মেয়েটা কেন বুদ্ধিমান হলো না?

আমি: কারন মেয়েদের কে বুদ্ধিমতী বলা হয় বুদ্ধিমান ছেলেদের বলা হয়!

আরিফ: ওওও, এই কথা ,এটা তো অনেক সহজ ছিল! আর একটা হয়ে যাক ভাইয়া!

আমি: আচ্ছা ঠিক আছে আরো একটি বলছি শুন

        ধরো আমি আমার বাইক নিয়ে ৮০ স্পিডে যাচ্ছি! আমার বাইকে কোন ধরনের লাইট নেই, রাস্তায় ও কোন লাইট নেই, হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে একটা সাদা বিলাই এসে পরলো , আমি বিলাই টাকে সাইট দিয়ে চলে আসলাম, কিভাবে?

রাজুর বোন: আপনার হাতে লাইট ছিলো!

আমি: নাহ কোন লাইট ছিলো না!

আরিফ: তাহলে তো এটা অসম্ভব?

আমি: সম্ভব?

মিষ্টি: কিভাবে?

আমি: আমি দিনে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম! আমি কি কখনো বলেছি আমি রাতে যাচ্ছিলাম? যিহেতু দিনের বেপার ছো লাইটের কোন দরকারই নাই!!

আরিফ: বাহ , ভাইয়া তো তামাম দিলেন, মজা লাগলো, আর একটা প্লাজি!

এর ভিতর রাজুকে গা ধুয়াতে নিয়ে যাচ্ছে,সবাই ওখানে ব্যস্ত!

আমি: এখন তো,বলা যাবে না,পড়ে ইনশাআল্লাহ!

মিষ্টি ও উঠে চলে গেল! আমিও রুমে চলে গেলাম!

কিছু সময় রুমে থাকলাম, কিন্তু একা একা ভালোও লাগছে না কি করি ,যাই মিষ্টি কে ডেকে নিয়ে আসি।

বাইরে দিয়ে দেখি মিষ্টি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি মিষ্টির পাশে গিয়ে ওর কানে কানে বললাম, আমার রুমে চলেন।

মিষ্টি: কেন? এখন যেতে পারবো না।

আমি: দেখুন আপনি যদি এখন আমার রুমে না যান তাহলে আমি কিন্তু আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাবো। তখন বুঝবেন কোত ধানে কত চাল।

মিষ্টি: আপনি এতো বাচ্চাদের মতো পাগলামি করেন কেন? আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি আসতেছি।

কিছু সময় পর মিষ্টি আমার রুমে আসলো।

আমি:এতো দেরি লাগলো, আসতে?

মিষ্টি:কেনো আসতে বললেন?

আমি: আজকে ডাক্তারের কাছে গেছিলাম। 

মিষ্টি: ডাক্তার কি বল্ল?

আমি:ডাক্তার বললো আমার শরীরে নাকি “ভিটামিন এর অভাব আছে। সুন্দরী কোনো মেয়ের সাথে সময় কাটালে নাকি এই ভিটামিনের অভাব পূরন হবে। 

এটা শুনে মিষ্টি হাসতে শুরু করলো।

আমি: তো আমাকে আসতে বললেন কেন? কোন সুন্দরী মেয়ের কাছে ই যেতে পারতেন!!

আমি: সুন্দরী মেয়ে বলতে আমি তো একমাত্র আপনাকেই চিনি। আপনাকে ছাড়া আর কাউকে তো আমার সুন্দরী মনে হয়না। তাই।

মিষ্টি: বাহহ আপনি তো খুব ঢং করতে পারেন?

আমি: কেন ঢং কি শুধু মেয়েরাই করতে পারে?

মিষ্টি: তারমানে আপনি মনে নিলেন যে ছেলেরাও ঢং করে।

আমি: জি মেনে নিলাম! আচ্ছা বাবা মা আসবে না?

মিষ্টি: কালকে আসবে!

আমি একটা গিফট বক্স মিষ্টি কে দিলাম

আমি: এই নিন,এইটা আপনার জন্য!!

মিষ্টি বক্স টা খুলে দেখলো একটা হীরের আংটি!

মিষ্টি: এইটা কি সত্যি হীরের আংটি?

আমি: জি? পছন্দ হয়েছে? আমি নিজে অনেক বেছে বেছে পছন্দ করেছি!

মিষ্টি: অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে, আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি আমি হীরের আংটি পড়ব। কিন্তু এতো টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল?

আমি: কেন? আমি চাই আমার প্রিয়তমা কে সুন্দর লাগুক,এটা কি অপরাধ??

মিষ্টি: না অপরাধ না‌!! কিন্তু আজকে দুপুরে রাজু ভাইয়া কে দামি কাপড় কিনতে দিলেন না, আবার নিজে এতো টাকা খরচ করলেন?

আমি: প্রথমতো রাজু আজকের কাপড় টা আর কখনো ব্যবহার করবে না। আর আপনি এইটা সারা জীবন ব্যবহার করতে পারেন। আর দ্বিতীয় তে রাজুর পারিবারিক অবস্থা এখন খুব একটা ভালো না, এমনি আংকেল আন্টি অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছে।

আর তাছাড়া আমি আপনাকে উপহার দিলাম। আর আপনি তো জানেন ইছলামে উপহার দেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, কেননা হাদীস আছে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তোমরা পরস্পরে উপহার বিনিময় করো।কারণ তা অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ ভাব দূর করে।( ইমাম আহমাদ,আলমুসনাদ:৯২৫০)

মিষ্টি: হুম, তখন রাজু ভাইয়া কে অনেক সুন্দর করে বুঝিয়েছেন, ভালো হয়েছে, । নাহলে অনেক অপচয় করতো।

মিষ্টি কথা বলতেছে, আমি মিষ্টির মায়াবী মুখের দিকে এক নজরে চেয়ে আছি, এতো সুন্দর মাতাল করার মতো চেহারা, এতো সুন্দর করে ছোট ছোট করে কথা বলে , মনে হয় এই মুহূর্তের জন্যও যেন শেষ না হয়, আমার চেয়ে থাকা দেখে মিষ্টি লজ্জায় মাথা নিচু করলো।

মিষ্টি: আপনি এভাবে চেয়ে থাকবেন না, আমার লজ্জা করে।

আমি: আচ্ছা আপনি জানেন? আপনি যদি টাইটানিক জাহাজে থাকতেন তাহলে তো জাহাজ ডুবতো না, কারণ আইচবার্গ আপনাকে দেখেই গলে গেতো।

মিষ্টি: এই কি সব বলেন, আপনি অনেক দুস্ট।

আমি: আচ্ছা আরো একটি অনুরোধ?

মিষ্টি: কি।

আমি: এখন থেকে আপনে না , তুমি।

মিষ্টি: আমি পারবো না।

আমি: তোমাকে পারতে হবে।

মিষ্টি: আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করবো।

আমি: আচ্ছা তোমার সবথেকে কি বেশি ভালো লাগে।

মিষ্টি: আমার প্রজাপতি অনেক ভালো লাগে, বিশেষ করে নীল প্রজাপতি।

আমি: পছন্দের রঙ?

মিষ্টি: নীল! আচ্ছা আপনি কি করতে ভালোবাসেন?

আমি:আপনার সঙ্গে কথা বলতে?

মিষ্টি: ফাজলামি করেন আমার সঙ্গে ? সত্যি করে বলেন?

আমি: বলছি তো এতো রেগে যান কেন। আমার সাধারণতে পঢ়তে ভালো লাগে।

মিষ্টি: সত্যি ………… দেখছেন আপনি কতো লাকি?

আমি: বুঝলাম না . কিভাবে আমি লাকি ?🤔


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *