নিল প্রজাপতি
পর্ব:০৪
লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!
মিষ্টি: আল্লাহ যে কাজটি সর্ব প্রথমে করতে বলেছেন ঐ কাজ টাই আপনার পছন্দের কাজ । তাহলে দেখুন আল্লাহ্ আপনাকে কতো ভালোবাসে ।
আমি: তারমানে হচ্ছে আল্লাহ আমাদের সর্ব প্রথম যে আদেশ করেছেন তা হলো পড়া?
মিষ্টি: হুম , পবিত্র কোরআনে প্রথম যে আয়াত নাজিল হয়েছে তা হলো পড়ো।
আমি: বাহ… সত্যি অসাধারণ এতো সুন্দর কথা সব থেকে আগে বলেছেন।
মিষ্টি: হুম
আমি: আচ্ছা আপনার পছন্দের খাবার কি ?
মিষ্টি:এই ধরেন আইচক্রিম , ফুচকা , চকলেট এইগুলো খেতে অনেক ভালো লাগে । আপনি কি খেতে ভালোবাসেন ?
আমি: গাজরের হালুয়া, চিকেন বিরিয়ানি।
মিষ্টি: আমাকে একদিন রান্না করে খাওয়াবেন তো?
আমি: অবশ্যই, তোমাকে খাওয়াবো না তো কাকে খাওয়া!
মিষ্টি: তাহলে অপেক্ষা থাকলাম!
আমি: তুমি আমার মিষ্টি একটা বউ, তোমার জন্য তো আমি সারাজীবন রান্না করতে পারি!
মিষ্টি: হুম হয়েছে,আর তেল দিতে হবে না!
আমি: জানো আমার খুব ইচ্ছা করতো কি আমি কখনো প্রেম করবো না, আমি বিয়ের পর প্রেম করবো
,বউ আমাকে চা করে এনে দিবে, আমার দুজন একসাথে বসে চা খাবো, দুজনে লং ড্রাইভে যাবো,নৌকতে ঘূরবো, একদম চুপ চাপ একটা জায়গায় দুজনে বসে থাকবো প্রকৃতি আমাদের পাহারা দিবে,!
মিষ্টি: আমারো আচ্ছা করে, কিন্তু থাক এখন আর এতো রোমান্টিক হতে হবে না, এইটা বিয়ে বাড়ী, ভুলে গেলে,চলবে না! আচ্ছা এখন যাই অনেক সময় হয়েছে!
আমি: আচ্ছা, ঠিক আছে!
পরদিন সকালে মিষ্টির বাবা মা এসে আমাকে বাড়িতে দেখে তো আচরিত হয়ে গেছে! আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো, এখন তো মনে হচ্ছে বিয়ের বরকে রেখে সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত!
কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি আর বিয়ে বাড়ীতে থাকতে পারতেছি না, আজকে সন্ধ্যায় চলে যেতে হচ্ছে! তাই বাজারে গিয়ে মিষ্টি র জন্য কিছু গিফট কিনতে গেলাম, অনেক খুঁজে একটা নীল রঙের গোলাপ 🌹, কিছু চকলেট 🍫,একটা চিঠি, কিছু বই,আর একটা নীল শাড়ি গিফট বক্স করে নিয়ে আসলাম, সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি,সবার থেকে বিদায় নিলাম,রাজু আমার উপর অনেক রেগে আছে, আজ চলে যাচ্ছি দেখে, কিন্তু কি করার উপায় নেই!তার পর রুমে গিয়ে দেখি, মিষ্টি মন খারাপ করে বসে আছে, আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে, মিষ্টি কি গিফট বক্স টা দিলাম, মিষ্টি নিয়ে খাটের উপর রেখে দিলো,
আমি: আমাকে কিছু বলবেন না?
মিষ্টি কাঁদো কাঁদো গলায় বল্ল নিজের খেয়াল রাখবেন, এইটা বলে মিষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমিও এই প্রথম কোন মেয়েকে জরিয়ে ধরলাম!
সত্যি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এই ছোট ছোট হালাল ভালোবাসায় কত যে সুখ,কত যে শান্তি, তা শুধু তারাই বলতে পারেন! এই ছোট ছোট ভালোবাসার মুহূর্ত গুলো অসস্র টাকা দিয়েও কেনা যায়, না কারণ বৈধ ও ভালোবাসা অমূল্য!! যার কোন মূল্য করার মতো অর্থ এই পৃথিবীতে নেই !! স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা সত্যিই আল্লাহর বড় নেয়ামত, কারণ পৃথিবীতে সবার আগে বাবা আদম আর মা হওয়ার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে!! স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ইহকাল এবং পরকাল দুই জায়গায় জন্যই!
আমি বিদায় নিয়ে চলে আসলাম!!
দুই দিন পর
মিষ্টি বাসায় ফিরে গিফট বক্স খুলে তো অবাক হয়ে গেছে, এতো বস্তু- নীল শাড়ি,চখের কাজল, নীল সবুজ রেশমি কাঁচের চুড়ি,এক জোড়া নুপুর, আরো অনেক কিছু এবং ছোট ভাজের একটি চিরকুট!
মিষ্টি চিরকুটের ভাজটা খুলে পড়তে শুরু করলো
প্রথম সম্ভাষণে অনেক কথাই লিখেছিলাম। বারবার কাটাকুটি করে কলম বন্ধ করে বসে থাকলাম। কোনো শব্দকেই সম্পূর্ণ মন হয়নি আমার। প্রিয়তম, প্রিয়বরেষু, ভালবাসা, প্রিয়, আমার তুমি…. কতভাবেই তো লিখলাম।
এতগুলো বছর আমি একটা শব্দ খুঁজেছি, আপনাকে সম্ভাষণ করবার জন্য।
চিঠি লিখবো অথচ আপনাকে ডাকার উপযুক্ত শব্দ হবে না,তা কি করে হয়??
তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম আপনাকে হুমায়রা বলেই সম্বোধন করব! কারণ হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজে মা আয়েশাকে আদর করে হুমায়রা বলেই ডাকতেন! তাই আমি আপনাকে হুমায়রা বলে ডাকবো , আমার হুমায়রা!
আপনার কাছে কিছু চাওয়ার সাহস নেই আমার। আমি বরং আপনার কাছে নিজেকে দিয়ে দিলাম। আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পত্তি দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব থাকলো শুধু আপনার। আপনি আমার প্রসারিত বাহুডোরে না আসেন, তবু আমার সব কিছু আপনার। আমার সবকিছু চলবে শুধু আপনার কথামতো।
আমি জানিনা মানুষ কেন বলে প্রেমে অনেক কষ্ট। পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। তারা হয়তো জানেনা ভালোবাসা কি?
ভালোবাসা মানে একা থাকা। ভালোবাসা মানে অপেক্ষা করা। একদিন আপনার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া। যাকে পেলে এমনিতেই মনের সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যায়!
আশা করি উন্মুক্ত ধারায় মুক্ত বিহঙ্গের মতো সুখেই আছেন, আপনার ওই নিশাচর চোখের রক্তিম ধমনী মুগ্ধ করেছে আমায়! হয়তো কোন কবিতা নয় ,কোন কাব্য নয়, হয়তো হিমতি কন্যা হয়েই আমার হৃদয়ে হিমসাগরের মাঝে আপনি রক্তিম আভায় ভরিয়ে দিয়েছে আমায়! আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে এইভাবে কোন মেয়েকে চিঠি লিখব! আমি ভেবেছিলাম আমার জীবনে প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছু নেই, কিন্তু হঠাৎ….. আপনি আমার জীবনে আসলেন, যেভাবে রাতকে জয় করে সূর্য উঠে !! সত্যি বলতে আপনাকে যখন প্রথম দেখি সেই এক দেখাই আমি আপনার চোখের মায়ায় পড়ে যাই, আমি যখনই চোখ বন্ধ করি তখন আপনার মায়া ভরা চোখ দুটো আমার সামনে ভেসে ওঠে ইচ্ছে করে সারা জীবন এই মায়া জড়িয়ে থাকি!
যাই হোক অনেক কথাই বললাম এখন সরাসরি বলি গতরাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখেছি, এজন্য আজ আসার আগে আপনাকে এগুলো দিয়ে যাচ্ছি , আপনি যে রকম আমার কাছে এসেও আমার থেকে দূরে দূরে থাকেন, আপনি ঠিক স্বপ্নতেও এরকম করেন,কাল রাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখলাম!!
আপনার পরনে সবুজ পারে নীল শাড়ি, দুহাত ভরা রেশমি কাশির চুরি, পিছনে খোঁপায় জড়ানো ফুলের গাজরা,দুহাত ভরা রেশমি কাশির চুরি, মায়া ভরা চোখে দৃষ্টি দিয়ে আমাকে ক্রমেই দূর্বল করে দিচ্ছেন, নুপুরের আর হাতের চুরির মৃদু ঝঙ্কারে শব্দে আমাকে কাছে ডাকছেন, আপনার পিছু ছুটতেই আপনি হারিয়ে গেলেন!মনের বড় ইচ্ছা ছিল আপনার কোলে মাথা রেখে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো, একটু দুষ্টুমি করে রাগাবো আপনাকে, আপনি রাগে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবেন,, আমি আপনার পছন্দের নীল গোলাপ ফুল দিয়ে আপনার রাগ ভাঙাবো!!!
অপেক্ষায় থাকলাম আমার নীল পরীকে দেখার জন্য
ইতি
আপনার পাগল
Leave a Reply