নিল প্রজাপতি
পর্ব:০৮
লেখক : হাছাব বিন আহমেদ!
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে,,আমি রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি আর ভাবছি, হয়তো ভাইয়ার সঙ্গে এতো খারাপ ব্যবহার না করলেও পারতাম।
মিষ্টি:কি করেন?
আমি: এইতো আকাশ দেখছি?
মিষ্টি:জানেন..? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও সুন্নত। নবীজী (সঃ) মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।-সূরা বাকারাঃ১৪৪, মুসলীম : ২৫৩১
আমি: হুঁম,
মিষ্টি: বেশি মন খারাপ?
আমি: না আমি ঠিক আছি, ভাবছি ভাইয়া কে কি একটা কল করবো?
মিষ্টি: আমার মনে হয় এখন কল না করে কাল একবার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করে sorry বললেই ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
আমার মন খারাপ দেখে হয়তো কথা ঘুরানোর জন্য বল্ল
মিষ্টি: আচ্ছা আপনি master of science কোথায় থেকে শেষ করেছেন?
আমি:University of Science & Technology, Meghalaya
মিষ্টি: মেজর কি ছিল?
আমি: botany ( উদ্ভিদ বিজ্ঞান)
মিষ্টি: ও আচ্ছা!
আমি: উদ্ভিদ বিজ্ঞান মেজর নিয়ে কি হবে
যদি তোমার হৃদয়ে গোলাপ হয়েই ফুটতে না পারি!!🙂
মিষ্টি: বাহ আপনি তো অনেক ভালো চুটকি ও বলতে পারেন??
আমি: আপনার মতো সুন্দরী বউ থাকলে,সবাই পারে!
মিষ্টি: হুম, হয়েছে আর ঢং করতে হবে না! চলেন ছাদে যাই বৃষ্টিতে ভিজবো!!
আমি: আপনি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসেন?
মিষ্টি: অনেক!!
দুজনে ছাদে আসলাম,,
মিষ্টি দুই হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে আছে, আমি পিছন থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে আছি, সে এক অবর্ননীয় অনুভূতি। আমি যদি কবি হতাম তাহলে নিশ্চয় কিছু রোমান্টিক কবিতা লিখে ফেলতাম। মিষ্টির কাঁধের উপর মুখ রেখে বললাম-
আমি: আমার মিষ্টি বউ কে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
মিষ্টি: তাই না দুষ্ট কোথাকার,, সব সময় শুধু দুষ্টামি। জানেন বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়??
আমি: শুনেছিলাম একবার, তো তুমি কি দোয়া করলে?
মিষ্টি: আমরা দুজন যাতে এক সঙ্গে জান্নাতে থাকতে পারি। আপনি কি দোয়া করলেন।
আমি: আমি দোয়া করলাম আমাদের যাতে খুব তাড়াতাড়ি কিউট একটি বাবু হয়।।
মিষ্টি: সবসময় কি যা তা বলেন, আপনি অনেক দুষ্টু(লজ্জা পেয়ে)
আমি যদি দুষ্টুমি না করি তাহলে বাবু আসবে কিভাবে??
মিষ্টি লজ্জায় আমার বুকেই মুখ লুকিয়ে ফেলল। মাঝে মাঝে মেঘের গর্জন ভেসে আসছে,, আর আমার পাগলি কেঁপে কেঁপে উঠছে। অনেক সময় ধরে ভিজলাম, আসলে কারো হুশ ছিলোনা,, বৃষ্টি একটু কমতেই দুজনে ঘরে এসে গোসল করে শুয়ে পরলাম।
পর দিন সকালে মিষ্টি কে ওদের বাসায় বাসায় রেখে আসলাম!!
এক সপ্তাহ পর
এখন আর সাধারতো মিষ্টি র সাথে ভালো করে কথাও হয়না!! কারণ কিছুদিন পর মিষ্টির ফাইনাল এক্সাম!!
ইশার নামাজ আদায় করে রাস্তার পাশে বসে কয়জন মিলে আন্ডা দিচ্ছি!
নাছির ,জামান, ছোফিকুল, করিম, মাঝে মাঝে এদের সঙ্গে সময় কাটালে ভালোই লাগে!! হঠাৎ জামান সিগারেট খেতে শুরু করলো!!
নাছির: আরে ভাই তোকে কতো বার বলবো এইসব ছেরে দে!
করিম: নাছির ছেরে দে ওকে অনেক বলেছি জামান সিগারেট খাওয়া বাদ দিবে না!!
নাছির: সিগারেট খাওয়া তো হারাম!!
জামান: নাছির তুই যে বললি সিগারেট খাওয়া হারাম,এইটার প্রমান দিতে পারবি?
নাছির: আমি কি প্রমান পকেটে নিয়ে ঘুরি না কি?
আমি: আচ্ছা জামান,তোকে যদি প্রমান করে দেই যে সিগারেট খাওয়া হারাম তুই কি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিবি??
জামান: আচ্ছা ঠিক আছে,তোরা যদি এখন প্রমান করতে পারিস তাহলে আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিবো!
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে প্রমান করে দিচ্ছি!!
(ক).প্রথমে আমরা পবিত্র কোরআন থেকে ৫ টি আয়াত তোকে বলি!!
১. [সূরা গাশিয়াহ আয়াত নং:-০৭] এই আয়াতে জাহান্নামীদের খাবারের প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন “জাহান্নামিরা ঐ খাবার খাবে যা তাদের পুষ্টি ও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না” তো আপনি যদি ধূমপান করেন তাহলে আপনার শরীরে কোনো পুষ্টি যোগায় না বা ক্ষুধাও কমাবে না । এই আয়াতের দ্বারা আমরা ধূমপান কে জাহান্নামীদের খাবার বলতেই পারি।
২. [সূরা নিসা আয়াত নং:-২৯, সূরা বাকারা আয়াত নং:-১৯৫] বলা হয়েছে” তোমরা নিজেদের কে ধংসের দিকে নিক্ষেপ করো না” আপনি যদি সিগারেটের প্যাকেট দেখেন তাহলে দেখবেন প্যাকেটর গাঁয়ে লেখা থাকে ধূমপান মৃত্যু ঘটায়” আপনি যদি ধূমপান করেন তাহলে আপনি আত্মহত্যা করেছেন যা এই দুই আয়াতের বিরুদ্ধে যায় । আপনি যদি ধূমপান মাকরূহ বলতে চান তাহলে আপনি দুইটি কাজ করতে পারেন । এক – আপনি বলতে পারেন আমি এই দুই আয়াত মানিনা।( তাহলে তো আপনি মুছলিম থাকবেন না)
দুই:- আপনাকে এমন একটি বিজ্ঞানের বই দেখাতে হবে যেখানে লেখা আছে ” ধূমপান করলে মৃত্যু হয়না” ( আমি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র আমি আজ পর্যন্ত এমন বই দেখিনি)
৩. আমি মনেকরি বিরি, সিগারেটে এইগুলা অপবিত্র বস্তু। আর পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফ আয়াত নং:-১৫৭ বলা হয়েছে” তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল ও অপবিত্র বস্তু হারাম”
৪. সূরা ইসরা আয়াত নং:-২৭ ” নিশ্চয় অপব্যবহার কারী শয়তানেরা ভাই” ধূমপান করা অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়।
(খ).
১. চলুন একটি রিপোর্ট দেখে নেই World health organization র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ধূমপান করার জন্য প্রত্যেক বছরে ৮ মিলিয়ন এ রো বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে ।
•Tobacco kills up to half of its users.
•Tobacco kills more than 8 million people each year. More than 7 million of those deaths are the result of direct tobacco use while around 1.2 million are the result of non-smokers being exposed to second-hand smoke.
এরপর ও আপনি ধূমপান কে ধূমপান বলেছেন কোনো যুক্তি তে।
রিপোর্ট দেখে আসতে পারেন:-https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/tobacco
২. আপনারা যদি শাইখ আবু মুআবিয়া ইসলাম কামারের লেখা ” হালাল বিনোদন ” বই টি র ১৯ নং পেজে দেখেন তাহলে দেখবেন ধূমপান কে এখানে সম্পুর্ন ভাবেধূমপান বলা হয়েছে।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক ইসলাম জানার ও আমল করার তৌফিক দান করেন আমীন।
এতো টুকু যানার পরেও যদি তুই সিগারেট খাওয়া হারাম মনে না করিস তাহলে আমার মনে হয় তোকে পাগলা গারদে পাঠানো উচিত!! আমার কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করলো
এর ভিতর আমার ফোন বেজে উঠল
মিষ্টি: আপনি কোথায়??
আমি: এই তো আসি, কেন?
মিষ্টি: একটু আমাদের বাসায় আসুন তো!!
আমি: এখন?
মিষ্টি: জি এখন
আমি: কেন? এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে!! কালকে সকালে যাই?
মিষ্টি: আমি এতো কিছু যানি না, আপনাকে এখনি আসতে হবে!!
বলেই ফোন কেটে দিল, আমাকে কিছু বলার সুযোগ ই দিলো না!!
আমি: আচ্ছা তোরা থাক, আমার যেত হবে! আর করিম শুন মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় না করে বসবি না, আজকে দেখলাম, তুই মসজিদে প্রবেশ করেই বসে পরলি!!
যাওয়ার আগে একটা হাদিস বলে যাই
আবূ কাতাদা ইবনু রিব’আ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক’আত সালাত (তাহিয়্যাতুল–মসজিদ ) আদায় করার পূর্বে বসবে না। (৪৪৪) (আ.প্র. ১০৮৯, ই.ফা. ১০৯৪
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে মিষ্টি দের বাসায় আসলাম, মিষ্টির আব্বু আম্মু র সাথে দেখা করে, চুপি চুপি মিষ্টির রুমে গিয়ে দেখি মিষ্টি সোফায় বসে আছে! আমি পিছন থেকে গিয়ে দু হাত দিয়ে মিষ্টির চোখ বন্ধ করে ধরলাম, সঙ্গে সঙ্গ মিষ্টি চিৎকার দিয়ে উঠলো! আমি কোনরকম এক হাত দিয়ে মিষ্টির মুখ আটকে ধরলাম! কারণ যদি বাসার সবাই মিষ্টির চিৎকার শুনে,কি ভাববে সবাই!
আমি: এই তুমি সব সময় চিৎকার করো কেন বলতো?
মিষ্টি: ওও আপনি আমার তো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো!!
আমি: কেন? অন্য কাউকে আশা করেছিলে?
মিষ্টি: কি সব ফালতু কথা বলেন
মিষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো , আপনি জানেন আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলায়ম!! আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না!
আমি:- এই তো আসলাম , তুমি আসতে বলবে আর আমি আসবো না তা কি করে হয় ।
মিষ্টি:- আপনি অনেক খারাপ ( অভিমানী কন্ঠে)
আমি:- আচ্ছা সরি , এই নাও তোমার জন্য ছোটো একটি গিফট।
মিষ্টি :-বাহ এতো চকলেট , আই লাভ ইউ ,
আমি:- হুম , অল্প ফ্রেস হবো ,
ফ্রেস হয়ে এসে দেখি খাবার রেডি করেছে।
মিষ্টি :- আপনার হয়তো খিদে পেয়েছে , ভাত খেয়ে নিন .
আমি:- বাহ গাজরের হালুয়া,, তুমি খেয়েছো?
মিষ্টি:- না !
আমি:- আচ্ছা চলো এক সঙ্গে বসি!
মিষ্টি: প্রথমে গাজরের হালুয়া টা খেয়ে দেখুন, আমি নিজ হাতে তৈরি করেছি!
আমি: আমি ভাবলাম খাইয়ে দিবেন?
এইটা শুনে মিষ্টি মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে ! বউ যদি খাইয়ে দেয় তাহলে তো সবকিছু ভালোই লাগবে ! তার পরো বলছি , সত্যি অনেক ভালো লাগছে !
সুবহা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আমি খাচ্ছি আর সুবহার দিকে তাকিয়ে আছি !
খাওয়া শেষে আমি মিষ্টির খাটে বসে মিষ্টি কে প্রশ্ন করলাম
আমি: এবার বলো এতো রাতে কেন আসতে বললে?
মিষ্টি: জীবনে প্রথম গাজরের হালুয়া তৈরি করলাম, আপনাকে ছাড়া কিভাবে খাই??
এইটা শুনে আমি কি বলবো,ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা, আমার এখন কি বলা উচিৎ
আমি: আচ্ছা মিষ্টি এক বাক্যে আমার প্রশংসা করো তো!!
মিষ্টি: কেন?
আমি: নিজের প্রশংসা শুনতে তো সবার ভালোই লাগে! তাই তোমার কাছে থেকে একটু প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে করছে!!
মিষ্টি: আপনি একজন সুন্দরী, গুণবতী, শান্তশিষ্ট, মেয়ের স্বামী!!
আমি: এ্যাহ, এইটা কি ধরনের প্রশংসা??
মিষ্টি: 🫠🫠😆😆
•••••
Leave a Reply